আমাদের জীবনে অনেক সময়ই চাওয়া পাওয়ার হিসাবে গরমিল হয়। আর মানুষ যখন তার প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু না পায়, তখন সে সহজে তা মেনে নিতে পারে না। সে তখন তার প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার জন্য হয় পরিস্থিতি, না হয় অন্য কোনো মানুষকে দায়ী করে। কাউকে না কাউকে দোষারোপ করে।
বেশিরভাগ সময়ই সে বিবেচনা করে না, তার এই অভিযোগ করা উচিৎ হচ্ছে কিনা। সে যা প্রত্যাশা করেছিল তা তার প্রাপ্য কিনা। যা তার পাওয়া উচিৎ বলে মানুষ মনে করে, তার জন্য উপযুক্ত কাজ সে করেছে কিনা এইসব আর বিচার করে না।
বেশ অনেক দিন আগে এক গ্রামে এক চাষী বাস করত। সেই চাষী প্রতিদিন তারই গ্রামের এক বেকারির মালিকের কাছে এক কেজি মাখন বিক্রি করত। মাখন কেনার সময় বেকারির মালিক আর সেটা মেপে নিত না। তবে একদিন সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে ওই এক কেজি মাখন মেপে দেখবে চাষী তাকে মাপে ঠিক দিচ্ছে না ঠকাচ্ছে।
মাপার পরে দেখা গেল মাখন এক কেজি নেই, পরিমাণে কিছু কম আছে। এতে বেকারির মালিক মারাত্মক রেগে গেল। রেগে গিয়ে সে ওই চাষীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিল।
বিচারের দিন বিচারক চাষীকে জিজ্ঞাসা করলেন মাখন মাপার জন্য সে কি কোনো বাটখারা ব্যবহার করে কিনা। চাষী তখন উত্তর দিল, মাননীয় আদালত, আমি খুব সাধারণ গরীব চাষী। আমার কাছে কোনো বাটখারা নেই, তবে একটা দাড়িপাল্লা আছে। আমি ওই মাখন মাপার জন্য সেই দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করি।
বিচারক আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, বাটখারা ছাড়া শুধু দাড়িপাল্লা দিয়ে আপনি কীভাবে মাপেন? এটা কীভাবে সম্ভব?
চাষী তখন বলল, মাননীয় আদালত, বেকারির মালিক আমার কাছে থেকে মাখন কেনা শুরু করার অনেক আগে থেকেই আমি তার কাছে থেকে প্রতিদিন এক কেজির একটা রুটি কিনি। প্রতিদিন সে যখন আমাকে ওই রুটি দেয়, আমি তখন সেটাকে দাঁড়িপাল্লার এক পাশে রেখে সমান ওজনের মাখন তাকে দেই। যদি কাউকে এর জন্য দোষ দিতে হয়, তবে সেটা ওই বেকারির মালিকেরই প্রাপ্য।
বেশিরভাগ মানুষই ওই বেকারির মালিকের জায়গায় থেকে অভিযোগ করে, নিজের না পাওয়ার জন্য অন্যকে দোষারোপ করে। কিন্তু সে কখনো চিন্তা করে দেখে না যে সে যতটুকুই পেয়েছে ততটুকুই হয়ত তার জন্য ন্যায্য। সে হয়ত তার প্রত্যাশা পূরণ করার মত যথেষ্ট কাজ করেনি।
চাষী ও বেকারির মালিকের গল্প থেকে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেখার আছে যে, অনেক মানুষের মধ্যেই এই ব্যাপারটা আছে যে সে নিজে অন্যায় করলেও আশা করে আরেকজন তার সাথে ন্যায় কাজ করবে। মানুষ তাই পায়, সে আসলে যা করে।
No comments:
Post a Comment