জ্বিনদের আকৃতি বদলানো
কালো কুকুর শয়তান
রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ (নামাযীর সামনে দিয়ে) কালো কুকুর গেলে নামায ভেঙে যায়। (সাহাবীদের তরফ থেকে) তাঁকে নিবেদন করা হলোঃ লাল ও সাদার তুলনায় কালো কুকুরের অপরাধ কী, জনাব? তিনি বললেনঃ কালো কুকুর হলো শয়তান (১)
জ্বিনরা কী কী রূপ ধরতে পারে
জ্বিনরা বহুরূপী হতে পারে এবং মানুষ, চতুষ্পদ পশু, সাপ, বিছে, উট, গরু, ছাগল, ঘোড়া, খচ্চর, গাধা এবং বিভিন্ন পশুপাখি প্রভৃতির আকার-আকৃতি ধারণ করতে পারে।
জ্বিন হত্যার পদ্ধতি
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রঃ) থেকে বর্ণিত, জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
মদীনায় যে সকল জ্বিন ছিল তারা মুসলমান হয়ে গেছে। এবার থেকে তোমরা ওদের মধ্যে কাউকে দেখলে তিনবার সতর্ক করে দেবে, তা সত্ত্বেও যদি সামনে আসে, তবে তাকে কতল করে দেবে। (২)
জ্বিনদের আকৃতি বদলের রহস্য
কাযী আবূ ইয়ালা হাম্বালী (রহঃ) বলেছেনঃ শয়তানদের এমন কোনও এখতিয়ার নেই যে তারা নিজেদের রূপ বদলাবে এবং অন্যান্য রূপ ধারণ করবে; অবশ্য একথা ঠিক যে আল্লাহ তা'আলা ওদেরকে কিছু বিশেষ কথা ও কাজ জানিয়ে দিয়েছেন, ফলে ওরা যখন সেই বিশেষ কথা ও কাজের প্রয়োগ ঘটায় তখন আল্লাহ ওদেরকে এক আকৃতি থেকে আরেক আকৃতিতে বদলে দেন। সুতরাং ‘শয়তান (ও জ্বিন) নিজের আকৃতি বদলাতে সক্ষম' বলার অর্থ, শয়তান (ও জ্বিন) তাদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ কথা ও কাজের প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম, যার দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে এক আকৃতি থেকে অন্য আকৃতিতে রূপান্তরিত করে দেন । এবং ওদের প্রকৃতিতে এই প্রক্রিয়া চলমান থাকে । কিন্তু স্বয়ং নিজে থেকে নিজেকে বিভিন্ন আকৃতিতে প্রকাশ করা জ্বিন ও শয়তানদের পক্ষে অসম্ভব। কেননা নিজস্ব আকৃতি থেকে অন্য কোনও আকৃতিতে
নিজেকে রূপান্তরিত করা মানে নিজের সৃষ্টির মূল উপাদান তথা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকেও বদলে দেওয়া। জ্বিন ও শয়তানদের পক্ষে এটা কীভাবে সম্ভব?
কাযী আবূ ইয়ালা আরও বলেছেনঃ ফিরিশ্তাদের বিভিন্ন রূপধারণের ক্ষেত্রেও ওই একই কথা প্রযোজ্য। ইবলীসের সম্পর্কে বলা হয় যে, সে 'সুরাকাহ্' (নামক এক ব্যক্তি)-র রূপ ধরে বের হয়েছে এবং হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-এর সম্পর্কে বর্ণনা আছে যে, তিনি দিহইয়া কাল্বী (নামক এক সাহাবী)-র রূপ ধরে আসতেন। এগুলো ওই অবস্থার সাথেই সম্পৃক্ত, যে কথা আমি উল্লেখ করেছি। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা এমন এক বাণীকে ওদের আওতাধীন করে দিয়েছেন যা উচ্চারণ করলে আল্লাহ্ ওদেরকে এক আকৃতি থেকে অন্য আকৃতিতে বদলে দেন।
জাদুকর জ্বিন ‘গইলান'
একবার হযরত উমর ফারুক (রাঃ)-এর সামনে ‘গইলান' এর কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বলেনঃ কারও এই ক্ষমতা নেই যে সে আল্লাহর সৃষ্টি করা আকৃতি বদলে দিতে পারবে, কিন্তু মানবসমাজের জাদুকরদের মতো জ্বিনদেরও জাদুকর হয়, ওদের দেখলে আযান দেবে। (৩)
হযরত আবদুল্লাহ বিন উবাইদ বিন উমাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনাব রসূলুল্লাহ (সাঃ) কে 'গইলান'-এর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: ওরা হলো জাদুকর জ্বিন । (৪)
গইলান দেখলে মানুষ কী করবে
হযরত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেছেনঃ আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে আমরা গইলান দেখলে যেন আযান দিই। (৬)
শয়তানকে ছুরি মারার ঘটনা
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর ছাত্র হযরত মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেনঃ আমি নামায শুরু করলে শয়তান হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর রূপ ধরে আমার সামনে আসত। পরে হযরত ইবনে আব্বাসের একটি কথা আমার মনে পড়ায় আমি নিজের কাছে একটি ছুরি রেখে দিলাম। তারপর সেই শয়তান আমার কাছে আসলে আমি তার উপর চড়াও হলাম এবং তাকে ছুরিবিদ্ধ করলাম। (সেই আঘাত সহ্য করতে না পেরে) সে দড়াম করে পড়ে গেল। এই ঘটনার পর আমি আর তাকে কখনও দেখিনি
দু'আঙুল জ্বিন
হযরত উবার বর্ণনাঃ হযরত ইবনে যুবাইর (রাঃ) একবার এমন এক মানুষকে হাওদার কাপড়ের উপর দেখলেন যার উচ্চতা মাত্র দু'আঙুল। হযরত ইবনে যুবাইর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুই কী? সে বলল, আমি বেঁটে বামন। হযরত ইবনে যুবাইর (রাঃ) বললেন, তুই তো জ্বিনদের অন্তর্গত। তারপর তার মাথায় ছড়ি দিয়ে এক ঘা মারতে সে পালিয়ে গেল
জ্বিনদের অন্তর্গত কিছু কুকুর ও উট
কাযী আবূ ইয়াম্লা হাম্বালী (রহঃ) বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃ) কুকুরের সম্পর্কে এ মর্মে বলেছেন যে 'কুকুর হলো শয়তান, যদিও কুকুর কুকুরের থেকে পয়দা হয়।' তেমনই উটের সম্পর্কে তাঁর উক্তি, উট হল জ্বিন যদিও সে উট
থেকে জন্মায়।
ব্যাখ্যা উপরে বর্ণিত হাদীসে মহানবী (সাঃ) কুকুর ও উটকে জ্বিন বলেছেন দৃষ্টান্ত বা উপমা স্বরূপ। অর্থাৎ তিনি জ্বিনের সাথে কুকুর ও উটের সাদৃশ্যের কথা বলেছেন । কেননা কালো কুকুর সাধারণত অন্যান্য কুকুরদের চাইতে বেশি দুষ্টু ও সবচেয়ে কম উপকারী হয় এবং উট কষ্ট সহ্য করা ও ভারি বোঝা বওয়ার দিক দিয়ে জ্বিনদের সাথে মিল রাখে।'
কতিপয় সাপও জ্বিন হয়
আমি (আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ)) বলছিঃ ইবনে আনআম (রহঃ) বলেছেন –জ্বিনরা তিন প্রকার প্রথম প্রকার জ্বিনদের (ভালো-মন্দ কাজের দরুন) সাওয়াবও আছে, আযাবও আছে, দ্বিতীয় প্রকার আসমান ও যমীনের মাঝখানে উড়ে বেড়ায় এবং তৃতীয় প্রকার জ্বিন হলো সাপ ও কুকুর।
সাপের আকারে রূপান্তরিত জ্বিন
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
সাপ হলো রূপান্তরিত জ্বিন, যেমন বাঁদর ও শূকরে রূপান্তরিত হয়েছিল বনী ইসরাঈল। (৯)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ সাপ রূপান্তরিত যেমন বাঁদর ও শূকর রূপান্তরিত মানুষ । জ্বিনেরা হয় সাদা সাপ। (১০)
জাদুকর জ্বিনদের তদবীর
হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
তোমরা রাতের বেলা সফর করবে, কেননা রাতে যমীনকে সংকুচিত করে দেওয়া হয়। (১১) আর জাদুকর জ্বিন (গইলান) যখন তোমাদের পথ ভুলিয়ে দেবে, তখন তোমরা আযান দেবে। (১২) (যার বরকতে আল্লাহর ফিরিশতারা পথভোলা মানুষদের ঠিকপথে আনিয়ে দেয়।)
প্রমাণসুত্রঃ
(১) সহীহ্ মুসলিম, কিতাবুস্ সলাহ্ হাদীস নং ২৬৫। সুনানে আবূ দাউদ, কিতাবুস্ সলাহ্, বাব ১০৯। সুনানে তিরমিযী, কিতাবুস্ সঈদ, বাব ১৬। সুনানে নাসায়ী, কিতাবুল লিলাহ্, বাব ৭। ইবনে মাজাহ্, কিতাবুল ইকামাহ্, বাব ৩৮। মুসনাদে আমাদ, ৫:১৪৯, ১৫১, ১৫৬,১৫৮, ১৬০; ৬ঃ ১৫৭, ২৮০। জামিই সগীর, হাদীস নং ৬৪৬১, হাদীস সহীহ্, বর্ণনায় হযরত আয়িশা (রাঃ)।
(২) মুসলিম শরীফ, কিতাবুস্ সালাম, হাদীস নং ১৩৯, ১৪০। সুনানে আবূ দাউদ শরীফ, কিতাবুল আদাব, বাব ১৬১। মুআত্তায়ে ঈমাম মালিক, কিতাবুল ইতিযান, হাদীস নং ৩৩। মুসনাদে ইমাম আহ্লাদ, ৩:১২।
(৩) আল্-হাবায়িক ফী আখবারিল মালায়িক, পৃষ্ঠা ৪৩০।
(৪) মাকায়িদুশ শায়ত্বান, হাদীস নং ২। মাসায়িবুল ইনসান মিন মাকায়িদুশ শায়ত্বান, ইবনে মুফলিজ মুকাদ্দাসী, পৃষ্ঠা ২। আকামুল মারজান পৃষ্ঠা ৩৩ ।
(৫) মাকায়িদুশ শায়ত্বান, হাদীস নং ৩। আকামুল মারজান, পৃষ্ঠা ৩৩।
(৬) মাকায়িদুশ শায়ত্বান, হাদীস নং ১০, সনদ যঈফ, আকামুল মারজান, ৩৩, ৩৪ ।
(৭) আবূ বাকর বাকিলানী ।
(৮) ইবনে আবী হাতিম ।
(৯) ত্ববারানী। আবুশ শায়খ, কিতাবুল উত্সাহ্। মুসনাদে আমাদ, ১: ৩৪৮। আল্-জ্বামিই আস্ সগীর, হাদীস নং ৩৮৭১। মুজমাউয্ যাওয়াইদ। ত্ববারানী, কাবীর, ১১ঃ ৩৪১। দুররে মানসুর ২ঃ ২৯০।
(১০) ইবনে আবী হাতিম।
(১১) অর্থাৎ স্বাভাবিক কারণে কষ্ট কম হয় বলে অল্প সময়ে বেশি পথ চলা যায়।-অনুবাদক।
(১২) ইবনে আবী শায়বাহ্। মুসনাদে আহমাদ, ৩ঃ৩০৫, ৩৮২। সুনানে আবু দাউদ। কিতাবুল জিহাদ, বাব ৫৭। মুস্তাদরকে হাকিম কিতাবুল হাজ্জ। সুনানুল কুব্রা, বায়হাকী। সবগুলির বর্ণনায় হযরত আনাস (রাঃ)। জামিই সগীর, হাদীস নং ৫৫২৩।
No comments:
Post a Comment