করনীয় - বর্জনীয় (ষষ্ঠ অধ্যায়) - EDUCATION

Breaking

Around the World

Tuesday, December 31, 2024

করনীয় - বর্জনীয় (ষষ্ঠ অধ্যায়)

ষষ্ঠ অধ্যায়

বন্ধুদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, কী করবে?

বন্ধুদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হলে এমন কোন কথা বলব যেন তারা সকলে হেসে দেয় অথবা এমন কোন কাজ করব যেন তারা প্রসঙ্গটা নিয়ে আর আলোচনা না করে বিষয়টা যেন হালকা হয়ে যায়

তোমার ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেলে কী করবে?

এমন কোন ঘটনা ঘটতে পারে যার ফলে অন্য লোকের ক্ষতি হতে পারে বা কেউ কষ্ট পেতে পারে এমন সময় মলিন মুখে খুব বিনয়ের সাথে সরি বলব ক্ষমা চেয়ে নেব তার কষ্ট বা ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব

উচ্চৈঃস্বরে হাসাহাসি করা কি ঠিক?

উচ্চৈঃস্বরে হাসাহাসি করা ঠিক না মেয়েদের জন্য এটা মেনে চলা খুব জরুরি

8 তোমার সাফল্যের কথা তোমার সন্মুখে আলোচনা করলে কী করবে?

বলব সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন

একজন একটি গল্প বলছে যেটা তুমি জান, কী করবে?

মন দিয়ে গল্পটা শোনব লোকটাকে বুঝতে দেব না যে গল্পটা আমি জানি

তবে লোকটা যদি বিশেষ ভুল বলে তাহলে শেষে তার ভুলটা ঠিক করে দেয়া যাবে

কাউকে কোন কথা দিয়েছ, কী করবে?

কাউকে কোন কথা দিলে সেটা রাখতে হয় তার কথাটা রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত এটা হওয়া উচিত যে, "প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য"

একটি বিষয় তোমার জানা দরকার কিন্তু জান না কী করবে?

বিষয়টা জানার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব জানতে গেলে লজ্জায় পড়তে হতে পারে ছোটরা বা সমবয়সী লোকজন লজ্জা দিতে পারে তারা হয়ত বলবে এটা তোমার আগেই জানা উচিত ছিল কিন্তু একবার লজ্জা পেয়ে বিষয়টা জানতে পারলে সারা জীবনের লজ্জা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এমনভাবে কেউ কোন কিছু আমার কাছে জানতে চাইলে তাকে লজ্জা না দিয়ে বিষয়টা জানিয়ে দেব

কারো কোন কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে করতে পার নি কী করবে?

প্রতিশ্রুতি দিলে কাজটা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত কিন্তু কোন কারণে যদি তা সম্ভব না হয় বা দেখা যায় দেরি দেখে লোকটা অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছে তবে তার কাছে কেন কাজটা করতে পারলাম না তার ব্যাখ্যা দেব, ক্ষমা চেয়ে নেব।

৯। অন্যদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা কি ঠিক?

কোনো বিষয়ে নিজে সংশ্লিষ্ট না থাকলে সেখানে মাথা ঘামানো ঠিক না যেমন কোন পরিবারে ঝগড়া হচ্ছে সেখানে কথা না বলা ভাল।

১০। কাউকে লজ্জা দেয়া কি ঠিক?

কাউকে লজ্জা দেয়া ঠিক না। অন্যকে লজ্জা দেয়ার অর্থ নিজে লজ্জা পাওয়া। কেউ যদি কোনো বিষয় না জানে বা কোনো কাজে ভুল করে তবে তাকে বুঝিয়ে দেয়া যায়। সরাসরি সম্ভব না হলো অন্য কোনভাবে বুঝিয়ে দেয়া যায়। তবে লজ্জা দেয়া ঠিক না।

১১। কেউ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়লে কী করব?

কেউ যদি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে তাকে স্বাভাবিক করে নিতে হবে। কেউ হয়ত ছেড়া কাপড় পরে এসেছে, কাপড় ময়লা হয়ে গেছে বা এমন কোন কাজ করছে যার জন্য সে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। এসব বিষয়ে দৃষ্টি না দেয়া ভাল। তবে কাপড়ে ময়লা পড়লে বা মুখে ময়লা দেখলে লজ্জা না পায় এমনভাবে বলা যাবে।

১২। ধার করা কি ঠিক হয়?

ধার করা ঠিক না। ধার করলে আত্মার স্বাধীনতা নষ্ট হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ধার করলে সেটা খুব তাড়াতাড়ি পরিশোধ করতে হয়।

১৩। প্রশ্নের উত্তর কেমন হবে?

প্রশ্নকারিকে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দেয়া ভাল। একজন জিজ্ঞাসা করল সাইকেলটি কার? উত্তর হবে আমার বা প্রকৃত মালিকের নাম বলতে হবে। কিন্তু, "আমার না হলে পেলাম কোথায়?" এমন বলা ঠিক না। একজনের সাথে পরিচয় করানো হল উনি একজন ডাক্তার। তখন প্রশ্ন করল ডাক্তারসাহেব কী করেন? উত্তরে ডাক্তারসাহেব ডাক্তারি করেন আর কী করবেন? এমন বলা ঠিক না। বলতে হবে উনি অমুক হাসপাতালে আছেন বা ঐখানে প্রাকটিস করেন ইত্যাদি।

১৪। বিকৃত নামে কাউকে কি ডাকা যাবে?

নাম মানুষের প্রথম পরিচয়। প্রত্যেককে যথাযথ নামে ডাকা উচিত। নামের সংক্ষেপ করে ডাকা ঠিক না। তাজীমকে বললাম তাজু, লম্বা লোককে লম্বু, বেটে তাই বাটু, যশোরে বাড়ি তাই যশোরী, কিছুদিন বিদেশে থেকে এসেছে তাই বিদেশী, এমন বলা ঠিক না। বিকৃত নামে ডাকলে মানুষ লজ্জা পায়। অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। পরিবারের লোকজন নাম বিকৃত হবার জন্য বেশি দায়ী থাকে। মানুষকে বিকৃত নামে ডাকার অর্থ তাকে অবজ্ঞা করা, এটা এক প্রকার অন্যায়। যেই হোক না কেন প্রতিটি মানুষকে সঠিক নামে ডাকা উচিত। একটি মানুষকে যতবার বিকৃত নামে ডাকা হয় ততবার তার মনে কষ্ট দেয়া হয়। আদর করে, সোহাগ করে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেভাবে হোক না কেন বিকৃত নামে ডাকা যাবে না।

১৫। বিদেশে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে থাকা কি ভাল?

পড়াশোনা, চিকিৎসা, ভ্রমণ, চাকুরি এসবের উদ্দেশ্যে অল্প দিনের জন্য বিদেশ . যাওয়া ভাল। তবে সারা জীবনের জন্য অন্য দেশে যাওয়ার মানসিকতা খুবই খারাপ। এসব লোক আমাদের দেশকে ভালোবাসে না। নিজের দেশকে বেশি ভালোবাসা দরকার।

১৬। খুব কাছ থেকে কথা বলতে হলে কীভাবে বলব?

মানুষের কাছ থেকে একটু দূরত্ব রেখে কথা বলতে হয়। বিশেষ কারণে যদি কারো কানে কানে কথা বলতে হয় বা খুব কাছ থেকে কথা বলতে হয় তবে মুখে হাত দিয়ে কথা বলা উত্তম

১৭। বন্ধুরা সকলে মিলে একজনকে লজ্জা দিচ্ছে, কী করবে?

বন্ধুমহলে বা অন্য ক্ষেত্রেও বিষয়টি দেখা যায়। কোনো লোক হয়ত কোনো কাজ করেছে যেটা শোভনীয় না। যার জন্য সে নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। আবার হাসি-তামাশা করার জন্য কাউকে লজ্জা দেয়া হতে পারে। এমন হলে যে লজ্জা পাচ্ছে আমি তার পক্ষ নেব।

১৮। কোনো বাড়িতে বন্ধুরা নিয়মিত আড্ডা দেয়া কি ঠিক?

কোনো অনুষ্ঠান করার জন্য নিজের বাড়িতে বা বন্ধুদের বাড়িতে সকলে আড্ডা দেয়া যায়। তবে নিয়মিতভাবে আড্ডা দেয়া ঠিক না।

১৯। কোনো অফিসে বা দোকানে বা ব্যবসার স্থানে আড্ডা দেয়া কি ঠিক?

কারো অফিসে বা ব্যবসার স্থানে নিয়মিত আড্ডা দেয়া ঠিক না। এতে নানারকম সমস্যা হয়। লোকটি হয়ত ভদ্রতার কারণে বলতে পারে না। কিন্তু এসব থেকে বিরত থাকতে হবে।

২০। অপরিচিত লোকের সাথে কেমনভাবে কথা বলব?

অপরিচিত লোকের সাথে হেসে হেসে ভদ্রভাবে কথা বলতে হয়। মানুষ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে থাকে। খারাপ ব্যবহার করা ঠিক না। রিক্সাওয়ালা যদি বেশি ভাড়া চায় তবে তার রিক্সায় উঠব না, কিন্তু রাগ করব কেন? দোকানদার জিনিসের দাম বেশি চাইলে কেনব না কিন্তু রাগ করব কেন? নিজের ভদ্রতা নিজে রক্ষা করব।

২১। কারো কাছে থেকে সেবা নিলে কী করব?

রিক্সাওয়ালার রিক্সা থেকে নেমে তাকে ধন্যবাদ দেয়া ভাল। দোকানদার থেকে চলে আসার সময় ধন্যবাদ দিয়ে আসা দরকার। কেউ হয়ত পথ চিনিয়ে দিলো, নিজে সরে দাঁড়িয়ে আমাকে পথ করে দিল, এমন সময় তাকে ধন্যবাদ দেয়া বা সালাম দেয়া এবং চোখেমুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ দেখানো উত্তম।

২২। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কী করব?

জীবনে এমন কোন সময় আসতে পারে যখন কী করব তা বুঝতে পারা যায় না। কোনো নিয়ম বা আইনের সাহায্য নিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। আলোচনা করার মত কেউ নেই। এমন অবস্থায় নিজের উপস্থিত বুদ্ধিতে যা ভালো মনে হয় তা করতে হবে।

২৩। কিছু কিছু ব্যাপারে কি ড্যামকেয়ার ভাব থাকা ভাল?

কিছু কিছু ব্যাপারে ড্যামকেয়ার ভাব থাকা ভাল। ভাল কাজ করছি বা নিজের কাজ করছি এমন ক্ষেত্রে কে কি ভাবল তা দেখার দরকার নেই। হয়ত সাইকেলটা পুরনো হয়ে গেছে, জামাটায় একটু দাগ লেগেছে, ব্যায়াম করার জন্য রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছি, অবসর সময়ে একটি দোকানে কাজ নিয়েছি, এসব ক্ষেত্রে কে কী ভাবল না ভাবল, চলতি পথে কেউ ভাল-মন্দ কিছু বলল তার দিকে খেয়াল না করা উত্তম।

২৪। যেখানে সেখানে বসা কি ঠিক?

সব স্থানে বসা ঠিক না। বাইরে এমন অবস্থা হতে পারে যে বসার জায়গা নেই যেখানে দাঁড়ানো যাবে কিন্তু মাটিতে বা মেঝেতে বসা যাবে না। আর বসতে হলে একা একা না বসে দল ধরে বসা ভালো। বসার সময় একটু উচু স্থানে বসার চেষ্টা করতে হবে। দুই পায়ের হাঁটুর মাঝে বেশি ফাঁকা রাখা ঠিক না। দুই পায়ের হাঁটু মিলিয়ে বসা উত্তম। পাঞ্জাবি বা এমন লম্বা জামা হলে দু পা জামা দিয়ে ঢেকে জামার লম্বা অংশ হাঁটুর নিচে নামিয়ে দিতে হবে। অথবা জামার লম্বা অংশ দুই পায়ের মাঝে চেপে দিতে হবে।

২৫। বড়রা ভুল করলে কেমনভাবে বলতে হয়?

বড়দের ভুল ধরা ঠিক না। বড় কেউ বা সম্মানিত ব্যক্তি যদি ভুল করে সেটা যদি একান্তই বলার দরকার হয় তবে সরাসরি বলা ঠিক না। বলা যাবে না যে এটা আপনার ভুল হয়েছে বা এমনভাবে কাজ করা আপনার উচিত হয় নি। বলা যেতে পারে, "এ কাজটি মনে হয় আমাদের ঠিক হয় নি বা আমরা মনে হয় কাজটি ভুল করেছি" ইত্যাদি।

২৬। কাউকে কিছু বললে সে সেটা শুনল কি শুনল না তা নিশ্চিত হওয়া কি প্রয়োজন হয়?

কাউকে কোনো কথা বললে নিশ্চিত হতে হবে যেন সে কথাটা শুনেছে। তাকে কাছে ডেকে বলতে হবে অথবা সে শুনেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। যেমন বললাম, "অনন্যা এক গ্লাস পানি দাও। সোনিয়া দরজাটা বন্ধ করে দাও"। এ কথাগুলো তারা শুনলো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

২৭। নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন কেন?

প্রত্যেকটা ব্যাপারে মানুষের নিজস্ব মতামত থাকা স্বাভাবিক। সব সময় নিজের মত অন্যের সাথে মিলবে না। পাশের বাড়িতে বিবাহ হচ্ছে আমাদের বাড়ির কেউ যাবে না। আমি যদি মনে করি যাওয়া উচিত তবে আমি যাব। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বেশি ভুল বোঝাবুঝি যেন না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

২৮। তুমি যাকে কথা বললে সে বুঝল কিনা কীভাবে জানতে চাইবে?

বুঝেছেন বা বুঝলি এমন না বলে যদি বলি "আমি বুঝাতে পারলাম কি?" তবে ভাল হয়।

২৯। অপরিচিত মহলে কোনো বিষয়ে আলোচনা চলছে যেটা তোমার মতের বিরুদ্ধে -কী করবে?

এমন ক্ষেত্রে চুপ করে থাকব বা সেখান থেকে চলে যাব। তবে তর্ক করব না।

৩০। একটি লোককে তুমি করে বলব না আপনি করে বলব বুঝতে পারছি না কী করব?

এমন সময় আপনি করে বলা উত্তম। যাকে আপনি বলছি সে নিজে থেকে হয়ত বলবে তুমি করে বলতে। তার আগে আপনি বলা ভাল। আপনি থেকে তুমি হয় কিন্তু তুমি থেকে আপনি হয় না। বয়সে ছোট, পদমর্যাদায় নিচে, এদের আপনি, ভাই, মামা, আপা এসব বলা ভাল। এতে নিজে অপমানিত হবার ভয় থাকে না। অন্যকে সম্মান দেয়া ভাল গুণ। ছোটদের আপনি করে বললে তাদের স্নেহ করা যাবে না তা ভাবা ঠিক না। সম্মানীত ব্যক্তি বা বড়দের নামের সাথে চাকুরির বা সম্পর্কের সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করতে হয়। যেমন- তাজ সাহেব, ডাক্তার শাহীন, আশরাফ মামা, শিরিন খালা, রেখা চাচি, লুনা আপা, সালমা ভাবি, লিলি দাদি, হালিমা নানি ইত্যাদি। এখানে সাহেব, ডাক্তার, মামা, খালা ইত্যাদি সম্মানসূচক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ছোটদের আদরসূচক শব্দ ব্যবহার করে ডাকা যায় যেমন টুইমণি, অদ্রিবাবু ইত্যাদি। রক্তের সম্পর্ক ছাড়া বয়সে ছোট হলেও সকলকে সম্মান দিয়ে কথা বলা ভাল। স্ত্রীর বড় ভাই বয়সে ছোট হলে এবং ছোট বোনের স্বামী বয়সে বড় হলে তাদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে হয়। রিক্সাওয়ালা, ফেরিওয়ালা, হকার এরা যদি বয়সে বড় হয় তবে এদের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলা ভাল। এরা আমাদের সম্মান করে তাই আমরা সম্মান পাই আর সম্মান না করলে কি-বা করার থাকে? আর বয়সে বড় হলে কোন অধিকারে আমরা এদের সাথে সম্মান না দিয়ে কথা বলি?

৩১। দু জনের মধ্যে পরিচয় করানোর নিয়ম কী হওয়া দরকার?

প্রথমে বড় জনের পরিচয় বলতে হবে পরে ছোট জনের পরিচয় বলতে হবে। পরিচিত হলে সালাম, নমস্কার দিতে হয়।

৩২। অন্যের পছন্দকে ছোট করে দেখা কি ঠিক হয়?

অন্যের পছন্দকে ছোট করে দেখা ঠিক না। এক একজনের পছন্দ এক এক রকম। দোকানে জিনিস কিনতে যেয়ে বলি এটা কি মানুষ পরে? এ গান কি মানুষ শোনে? এ খাবার কি কেউ খায়? এভাবে কথা বলা ঠিক না। আমার পছন্দ না হলে বলব এটা আমার পছন্দ না।

৩৩। ঘরের পোশাক পরে কি বাইরে যাওয়া যায়?

ঘরে আমরা যে পোশাক পরি তা পরে বাইরে যাওয়া কখনও ঠিক না। আর বাইরে যাবার সময় কি কাজে যাচ্ছি তা বুঝে পোশাক নির্বাচন করতে হবে।

৩৪। টাই কীভাবে পরা ভাল?

টাই-এর ব্যবহার আমরা শিখেছি বৃটিশদের কাছ থেকে। বৃটিশরা যখন আমাদের দেশ শাসন করত তখন আমাদের টাই পরার প্রচলন শুরু হয়। সাধারণভাবে ডিগ্রি পাস করার পর টাই পরে। টাই পরলে ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট, জুতা বা পেছনে বেল্টওয়ালা স্যান্ডেল যাকে আমরা হাফ-সু বলি এগুলো পরা ভাল। শীতকালে বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে গরম কালে টাই পরা হয়। ডিগ্রিপাস লোকদের কোট পরলে টাই পরা ভাল। সব কাপড় সব সময় পরা যায় না। খেলাধুলা করার জন্য একটি ভাল পোশাক কিনেছি সেই পোশাক পরে দুপুরের বাজারে যাওয়া ঠিক না। তেমনি কোট-টাই থাকলে সব সময় পরা যায় না। বাচ্চাদের স্কুলের ইউনিফর্মের সাথে টাই দেয়া চলে।

৩৫। কেমন পোশাক পরা ভাল?

পোশাক সুন্দর হওয়া দরকার। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। বেশি লম্বা প্যান্ট পরলে রাস্তার ময়লা ঘরে চলে আসে। মার্জিত পোশাক পরতে হবে। ধর্মীয় বা অফিসের নিয়ম মেনে পোশাক নির্বাচন করলে খুব ভাল। এমনভাবে পোশাক পরতে হবে ও চুল কাটাতে হবে যেন ভদ্র দেখা যায়। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর সাথে যেন চেহারার মিল না হয়। পুরুষের লাল ও রেশমি কাপড় না পরা ভাল। শার্ট, গেঞ্জি, মোজা দু দিনের বেশি পরা ঠিক না। গন্ধ হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে।

৩৬ অশালীন পোশাক পরলে কী হয়?

পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্ব, রুচি ইত্যাদির পরিচয় বহন করে। অশালীন পোশাক পরা কখনও ঠিক না। অশালীন পোশাক পরলে মানুষ সেটা দেখে কিন্তু পছন্দ করে না। মানুষ জোকারি পছন্দ করে কিন্তু জোকারকে পছন্দ করে না। অশালীন পোশাক পরিহিত ব্যক্তিকে মানুষ আপন ভাবতে পারে না। আর আপন করে নিলেও সে সম্পর্ক খুব ভাল হয় না। পোশাক এমনভাবে পরতে হবে যেন গায়ের পোশাকের দিকে খেয়াল না করতে হয়। জামার বুকের বোতামটা খুলে রেখে বারবার হাত দিয়ে জামা ঠিক করা, হাফহাতা জামা পরে বারবার হাতা লম্বা করা এমন যেন না করতে হয়। স্বচ্ছন্দে যেন চলাচল করা যায়। রুচিশীল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে বাইরে যেতে হয়। তবে সেজে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে বিবাহিতা মহিলাদের সেজে বাইরে যাবার কোন যুক্তি নেই। যারা সাজুগুজু করে তারা সাজুগুজু করার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে না। সাজুগুজুর অর্থ বুঝলে সাজুগুজু করে বাইরে যেত না।

মেয়েদের উপর নির্যাতনের বড় কারণ সাজুগুজু করা। আমাদের দেশে মুসলিম মহিলারা যে সাজুগুজু করে তা মুসলিম সংস্কৃতি থেকে আসে নি। আমাদের দেশের মুসলমানরা ক পুরুষ আগে মুসলমান ছিল না। পরে মুসলমান হলেও সব কিছুতে মুসলমানদের মত অভ্যস্ত হয় নি। বিয়েতে যে গায়েহলুদ দেয়া হয় এটা মুসলমানদের ধর্মে নেই। আমাদের দেশের পুরনো সংস্কৃতি থেকে এটা এসেছে। টিভি দেখে এগুলোর নতুন নতুন বিভিন্ন কৌশল আমরা শিখচ্ছি। ব্রিটিশদের থেকেও আমরা বিভিন্ন ধরণের পোশাক পরতে শিখেছি।

মানুষের আচরণ, কাপড় মানুষের গুনার কারণ হতে পারে। একটি পথে একটি লোক দাঁড়ানো আছে যাকে কেউ চেনে যে সে খারাপ লোক অথবা তার পোশাক, ভাবভঙ্গি দেখে খারাপ মনে হচ্ছে। এমন সময় কেউ যদি ঐ পথ দিয়ে না যায় বা দেরি করে বা অন্য পথ দিয়ে ঘুরে যায় তবে ঐ লোকের কি গুনাহ হবে না? তাছাড়া একজন এমনভাবে পোশাক পরলেন তা দেখে অন্যজনের কুচিন্তা হলো তবে যে ঠিকমত পোশাক পরল না তার কি গুনাহ হবে না? কাপড় পরার পর পরিহিত কাপড় নিয়ে যেন চিন্তা করতে না হয়। এমনভাবে কাপড় পরলাম যে কোন লোক এলে খুব সমস্যা হয়, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি কিন্তু বড় কেউ এলে সমস্যা তখন হয়ত কাপড় ঠিক করতে

হচ্ছে, হাঁটা-চলা করতে সমস্যা হয় না কিন্তু রিক্সা বা গাড়িতে চড়ার সময় সমস্যা হয়। কোথাও বসে আছি কিন্তু কাপড়ের দিকে বারবার মন দিতে হচ্ছে, কাপড় বারবার ঠিক করতে হচ্ছে এমন কাপড় কেন পরব? বসব, উঠব, দাঁড়াবো, সোজা হব, বাঁকা হব, পানিতে ভাসব এমনকি যদি সৃষ্টিকর্তা অজ্ঞান করে দেন তবুও পরিহিত কাপড় নিয়ে যেন চিন্তা না থাকে। সব সময় ড্যাম কেয়ার ভাবে থাকতে পারি। পোষাকে যেন ঘামের বা অন্য গন্ধ না হয়। এতে পাশের লোকের সমস্যা হতে পারে। অনেকে সামান্য পরিমাণ আতর বা কোন সুগন্ধি ব্যবহার করে। এটা ভাল অভ্যাস।

৩৭। ময়লা কাপড়, ভেজা কাপড় কেমন স্থানে রাখব?

যেসব স্থান দিয়ে মানুষ চলাচল করে সেসব স্থানে ময়লা কাপড় বা ভেজা কাপড় রাখা ঠিক না। মানুষের চোখ যায়, গন্ধ লাগতে পারে, খাবার স্থানে, লোকজন যেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে ময়লা বা ভেজা কাপড় রাখা ঠিক না।

৩৮। নিজের ব্যবহৃত রুমাল, টিস্যুপেপার কোথায় রাখব?

নিজের ব্যবহৃত রুমাল, টিসুপেপার, মোজা ইত্যাদি লোকের সামনে রাখা ঠিক না। টিস্যুপেপার ফেললে এমন স্থানে ফেলতে হবে যেন সহজে লোকের দৃষ্টি না যায়। এগুলো অন্যের জন্য ঘৃণার কারণ হতে পারে। টিস্যু ব্যবহার করার চেয়ে রুমাল ব্যবহার করা ভাল। কারণ টিস্যুপেপার কোথায় ফেলব তা একটি সমস্যা।

৩৯। অশালীন ভাষায় কথা বলা কি ঠিক?

কখনও অশালীন ভাষায় কথা বলা ঠিক না। এতে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের কেউ উপস্থিত থাকলে খুব সচেতন হয়ে কথা বলতে হয়। গালি দেয়া কখনো ঠিক না।

৪০। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাড়ি থেকে বের না হলে কী সমস্যা হয়?

বাইরে গেলে যেসব ব্যক্তিগত জিনিস প্রয়োজন হতে পারে তা নিয়ে বের হওয়া দরকার। শিক্ষিত লোকের কাছে পেন, একটু সাদা কাগজ, চিরুনি, রুমাল, প্রয়োজনীয় টাকা এগুলো রাখতে হয়। অন্যের রুমাল ব্যবহার করা ঠিক না। স্কুলে বা অফিসে গেলে সেখানে যেসব জিনিস লাগবে তা নিয়ে যাওয়া দরকার। অন্যের জিনিস নেয়া ঠিক না।

৪১। থুথু ফেলার সময় কোন দিকে খেয়াল রাখতে হবে?

থুথু ফেলা খারাপ অভ্যাস। থুথু ফেলার সময় মনে রাখতে হবে যে থুথুতে খুব জীবাণু থাকে। এটা যেন অন্যের সমস্যার কারণ না হয়। লোকের সামনে থুথু ফেলা ঠিক না। বেসিনে থুথু ফেললে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। ঘরের মধ্যে, বারান্দায় বা এমন কোনো স্থানে থুথু ফেলা যাবে না যেন পরে সেটা লোকের চোখে পড়ে। ভুলক্রমে তেমন কোথাও থুথু ফেলা হলে পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। সম্ভব না হলে পা দিয়ে মুছে দিতে হবে। একান্ত সমস্যা হলে রুমালে থুথু ফেলা যায়। উপর থেকে নিচে থুথু ফেলতে গেলে দেখতে হবে থুথু কোথায় পড়ছে। হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে থুথু ফেলা ভাল। মুখে থুথু এলেই ফেলে দেয়া ঠিক না। সময় নিয়ে দূরে ফেলতে হবে। থুথু ফেলার সময় শব্দ করা যাবে না। জানালা দিয়ে থুথু ফেললে জানালার গ্রিলের কাছে মুখ নিয়ে থুথু ফেলতে হয়।

যেসব স্থান দিয়ে লোকে যাতায়াত করে, যেখানে ঝাড়ু দেয়া হয় বা পরিষ্কার রাখা হয় সেখানে থুথু, ছেড়া কাগজ, বাদামের ঘোসা এসব ফেলা ঠিক না। আমাদের মুখে থুথু এলেই বা কোন ময়লা হাতে এলেই আমরা হাত থেকে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিই। নিজের অজান্তেই আমরা এটা করি। কিন্তু এক মুহূর্ত চিন্তা করলে, এদিক সেদিক তাকালে এগুলো ফেলার ভাল স্থান পাওয়া যায়। এটা শুধু অভ্যাসের ব্যাপার। প্রয়োজনে ময়লা পকেটে রেখে পরে অন্য স্থানে ফেলা যায়। ঘর ঝাড়ু দিলে বাতাসের মাধ্যমে আসা ধুলা ছাড়া তেমন কিছু বের হবার কথা না। ছোট-খাট যে ময়লা হোক না কেন তা বাইরে ফেলতে হবে বা বাস্কেটে রাখতে হবে। দু পাঁচ দিন ঘর ঝাড়ু না দিলেও যেন মনে হয় ঘর ঝাড়ু দেয়া আছে। কারো দিকে থুথু বা ময়লা ফেললে তাকে অপমান করা হয়।

৪২। সাইকেলে বসে গুরুজনের সাথে কথা বলা কি ঠিক হয়?

গুরুজনের সাথে কথা বলতে গেলে সাইকেল থেকে নেমে কথা বলতে হয়।

৪৩। সাইকেল কোথায় রাখব?

সাইকেল রাখার স্থান নির্দিষ্ট করা থাকলে সেখানে সাইকেল রাখব। প্রবেশ পথে বা এমন কোন স্থানে সাইকেল রাখব না যেন অন্যের ক্ষতি হয়।

৪৪। রিক্সাওয়ালা কম ভাড়া চাইলে কী করবে?

রিক্সাওয়ালা যদি কম ভাড়া চায় বা ভাড়া না জানে তবে তাকে সঠিক ভাড়া দেয়া উচিত। রিক্সাওয়ালার সাথে ভাড়া নিয়ে ঝগড়া করা ঠিক না। বিশেষ সমস্যা হলে দুই এক টাকা বেশি দিয়ে চলে আসা ভাল। তবে কোন কোন রিক্সাওয়ালা খারাপ ব্যবহার করে। এজন্য পূর্বেই যথাসম্ভব ভাড়া, স্থান, দূরত্ব ঠিক করে নিলে ভাল হয়। আমি যদি রিক্সাওয়ালাকে বাম হাত দিয়ে টাকা দিই এবং রিক্সাওয়ালা যদি সেটি ডান হাত দিয়ে নেয় তবে ভদ্রতা জ্ঞান কার বেশি?

৪৫। রিক্সায় বসার সময় কোন দিকে খেয়াল রাখতে হবে?

ভালভাবে রিক্সা ধরতে হবে। পাদানির সামনে যে রড থাকে তাতে পা চাপ দিয়ে বসতে হবে। সাথে বাচ্চা থাকলে তাকে কোলে নিয়ে বা পাশে বসিয়ে ভালভাবে ধরতে হবে। সৌন্দর্য হানির ভয়ে আমরা অনেক সময় বাচ্চাকে ধরে বসি না। এটা কখনও ঠিক না। আবার পাকা বাচ্চারা বড়দের ধরে রাখতে দেয় না। সেক্ষেত্রে যদি আমরা বাচ্চাদের বলি, "তোমাকে ধরে না রাখলে আমি রিক্সা থেকে পড়ে যাব"। তখন বাচ্চা গর্ববোধ করে বলে, "তাহলে আমাকে ধরে রাখো"। রাস্তার পাশ দিয়ে রিক্সায় উঠব আবার রাস্তার পাশ দিয়ে রিক্সা থেকে নামব।

৪৬। রিক্সায় পাশাপাশি বসলে কে কোন পাশে বসবেন?

স্বামী-স্ত্রী হলে স্বামী ডানে আর স্ত্রী বামে বসবেন। এ ছাড়া পুরুষ বামে বসবেন মহিলা ডানে বসবেন, বড় ডানে বসবেন ছোট বামে বসবেন, ঊর্ধ্বতন ডানে বসবেন অধস্তন বামে বসবেন। রিক্সা ছাড়া অন্য কোথাও পাশাপাশি বসা বা দাঁড়ানোর সময় এভাবে বসতে হবে বা দাঁড়াতে হবে।

৪৭। সাইকেল চালানোর সময় রাস্তায় মুরব্বিদের দেখলে কী করব?

সাইকেল চালানোর সময় রাস্তায় মুরব্বি দেখলে সাইকেল থেকে নেমে যাব। মুরব্বিকে সালাম দিয়ে তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আবার সাইকেলে উঠব। সম্ভব না হলে সাইকেল একটু আস্তে করে সালাম দেব। পথের মাঝে অনেক মুরব্বি বা বড়দের দেখলে সেখানে অবশ্যই নামতে হবে। সাইকেল চালানো অবস্থায় বেল বাজিয়ে মুরব্বিদের সরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া কখনও ঠিক না।

৪৮। সাইকেল বা মটরসাইকেল কি তাড়াতাড়ি চালানো যায়?

সাইকেল বা মটরসাইকেল কখনও তাড়তাড়ি চালানো ঠিক না। গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে চালানো ভাল। অন্য কোন গাড়ি সমস্যা করলেও যেন নিজের সমস্যা না হয় এমন গতিতে সাইকেল চালাতে হবে। ভিড় দেখলে, বাচ্চাদের স্কুলের সামনে খুব আস্তে আস্তে যেতে হবে। কিন্তু আমরা দেখি একস্থানে বন্ধুরা আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করল আবার অন্য এক আড্ডায় যাচ্ছে পথে দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছে। এটা ঠিক না।

৪৯। পথে কেমন গতিতে হাঁটতে হবে?

পথে খুব জোরে হাঁটা যাবে না, আবার খুব আস্তে হাঁটা যাবে না। হাঁটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পায়ের আঙ্গুলগুলো সামনের দিকে থাকে ও শরীর সোজা থাকে। নিচের দিকে ও সামনের দিকে তাকিয়ে পথ চলা ভাল। মুরব্বিদের পেছনে ফেলে সামনে চলা ঠিক না। প্রয়োজন হলে তাদের অনুমতি নিয়ে মুরব্বিদের আগে যাওয়া যাবে। হাঁটার সময় পা মাটিতে টেনে টেনে শব্দ করে হাঁটা যাবে না। জুতার শব্দ করে হাঁটা যাবে না।

৫০। বাসে বা ট্রেনে কেমনভাবে ভ্রমণ করব?

টিকিট যদি পূর্বে কাটার নিয়ম থাকে তবে পূর্বেই টিকিট কেটে নিতে হবে। টিকিট কাটার সময় লাইনে দাঁড়াতে হবে। আসন নির্দিষ্ট থাকলে নির্দিষ্ট আসনে বসতে হবে। গাড়ির ভেতর থুথু ফেলা যাবে না। সুপারভাইজার এলে তাকে সম্মানের সাথে টিকিট দেখাতে হবে। ঘুমোলে জিনিস চুরি হবার ভয় থাকে এবং পাশের লোকের সমস্যা হয়। ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালাতে বলা যাবে না বরং গাড়ি আস্তে চালানোর জন্য অনুরোধ করর। বাসে ভাড়া দেয়ার নিয়ম থাকেলে চাওয়া মাত্র ভাড়া দিতে হবে। নিজের গন্তব্য স্থলে পৌঁছানোর পূর্বে নামার জন্য প্রস্ততি নিতে হবে। নিজে ঘুমোলে সুপারভাইজারকে বলা যাবে না যে আমি অমুক স্থানে নামব আমাকে ডেকে দেবেন, নিজে সচেতন হতে হবে। জানালার উপরে বা জানালার বাইরে হাত রাখা যাবে না। বাসের জানালার গ্লাস সরে আসতে পারে বা ট্রেনের জানালার গ্লাস পড়ে বিপদ হতে পারে। নামার পূর্বে সকল মালামাল বুঝে নিতে হবে ও আস্তে আস্তে গাড়িতে উঠা-নামা করতে হবে। চলতি পথে কোন ষ্টেশনে গাড়ি থেকে নেমে কিছু কেনার প্রয়োজন হলে সুপারভাইজার বা অন্য যাত্রীদের বলে নামতে হবে। গাড়িতে খাওয়া দাওয়া না করা ভাল। অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খাওয়া ঠিক হবে না। জোরে জোরে কথা বলা যাবে না। বাস ফেরিতে উঠার সময় নেমে যাওয়া ভাল।

৫১। গুরুজনের সামনে কেমনভাবে বসব?

গুরুজনের সামনে সাধারণত না বসে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত, কিন্তু প্রয়োজনে বসতে হয়। সোজা হয়ে হাত উরুর বা রানের উপর রেখে বিনয়ের সাথে বসব। জোরে জোরে কথা বলব না। টেবিলের উপর বা হাতে কোন জিনিস নিয়ে খেলা করব না। মুখে হাত দিয়ে বসব না। মাথার চুল বা জামাকাপড় নিয়ে খেলব না। গুরুজন হাসি-তামাসা করতে পারে কিন্তু নিজে করব না। চলে আসার সময় সালাম দিয়ে আসব। গুরুজনের কাছে যাবার পূর্বে মোবাইল বন্ধ করে যাওয়া ভাল।

৫২। বড়দের ডাকতে কি তাদের গায়ে হাত দিয়ে ডাকা যায়?

বড়দের ডাকার সময় বিনয়ের সাথে সম্মান দিয়ে ডাকতে হবে। নাম ধরে বা গায়ে হাত দিয়ে ডাকা যাবে না।

৫৩। চাচা-চাচি, মামা-মামি, বড় ভাই-ভাবি, প্রতিবেশী মুরব্বিদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়?

মা-বাবার পর এসব লোকের স্থান। এমনও দেখা যায় মা-বাবার অনুপস্থিতিতে এঁরা বাচ্চা মানুষ করে। অনেক বাচ্চা নিজের মা-বাবা বাদ দিয়ে এঁদেরকে মা-বাবা বলে জানে। ছোট বেলায় এমনভাবে যাদের কাছে থেকেছি, খেলেছি তারা কত যত্ন করেছে, তাঁদের কত বিরক্ত করেছি তার শেষ নেই। তাই এসব লোকের সাথে খারাপ ব্যবহার করলে তারা খুব কষ্ট পান। অনেকে বলে তোমাকে সেই ছোট বেলায় দেখেছি। এতে বুঝতে হবে ছোট বেলায় লোকটা আমাকে আদর করেছেন। সব সময় এসব লোককে শ্রদ্ধা করতে হবে। সম্ভব হলে এঁদের জন্য কিছু করতে হবে।

৫৪। ছোট বেলায় যাদের সাথে খেলেছি তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা প্রয়োজন?

ছোট বেলায় যাদের সাথে খেলেছি, লেখাপড়া করেছি তাদের সাথে সারা জীবন বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করা উচিত। হয়ত কোন কারণে তারা আমার মত শিক্ষায়-দীক্ষায়, অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে বড় হতে পারে নি কিন্তু সব সময় তাদের ছোট বেলার খেলার সাথী ভাবতে হবে।

৫৫। বড়দের সাথে কথা বলতে হলে তাদের কি নিজের কাছে ডেকে আনা যায়?

বড়দের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের ডেকে আনা যাবে না। তাদের কাছে যেয়ে কথা বলতে হবে। তবে বিশেষ গোপনীয় কথা থাকলে অন্যদের কাছ থেকে তাদের বিনয়ের সাথে পাশে ডেকে নিয়ে কথা বলা যায়।

৫৬। বড়দের কাছে ছোটরা কি চিরদিন ছোট থাকবে?

বড়দের কাছে ছোটরা কখনও বড় হয় না। মা-বাবার কাছে সন্তান চিরদিন সন্তান, শিক্ষকের কাছে ছাত্র চিরদিন ছাত্র, বড়দের কাছে ছোট চিরদিন ছোট থাকবে।

৫৭। ছোট কেউ যদি বড়কে সালাম না দেয় তবে কী করা দরকার?

ছোটরা হয়ত জানে না বা বোঝে না যে বড়দের সালাম দিতে হয়। লজ্জা পেয়েও অনেক সময় সালাম দেয় না। এমন সময় বড়রা যদি ছোটদের সালাম দেয়, ভালমন্দ জিজ্ঞাসা করে তবে তারা শিখতে পারে। দুই একবার এমন হলে ছোটরা সালাম দিতে শেখবে।

৫৮। সালাম দেয়ার নিয়ম কী?

"আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ" বলে সালাম দিতে হবে। ছোটরা বড়দের সালাম দেবে। শিক্ষার্থী শিক্ষককে সালাম দেবে। যানবাহনে গমনকারী দাঁড়িয়ে থাকা লোককে সালাম দেবে। বাইরের থেকে আসা লোক উপস্থিত লোককে সালাম দেবে। মুসলমান একে অন্যকে সালাম দেবে। সালাম দিলে অবশ্যই "ওয়া আলাই কুমুসসালামু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু" বলে জবাব দিতে হবে।

৫৯। কখন সালাম দেয়া যায় না?

নামায আদায় কালে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত কালে, খাবার সময়, প্রসাব-পায়খানা করার সময় সালাম দেয়া ঠিক না।

৬০ যেখানে সেখানে ঘুমোনো কি ঠিক?

যেখানে সেখানে ঘুমোনো ঠিক না। কোথায় ঘুমোচ্ছি, সেখানে কে কে আছে তা ভালভাবে বুঝতে হবে।

৬১। খুব ঘনিষ্ঠ মহল না হলে কোথাও যেয়ে কি বসা যায়?

খুব ঘনিষ্ঠ মহল না হলে কোথাও যেয়ে প্রথমে বসা ঠিক না। তারা বললে তবে বসতে হবে। তাদের কাছে অনুমতি নিয়ে বসা যায়। তবে তারা না বললে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। সব স্থানে বসার অনুমতি চাওয়া যায় না।

৬২। আমাদের মধ্যে কেউ উপস্থিত হলে কী করব?

আমরা বসা অবস্থায় থাকলে যদি সম্ভব হয় প্রথমে তাকে বসতে দেব।

৬৩। লোকেরা পথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, কী করবে?

পথে দাঁড়িয়ে কথা বলা ঠিক না। আর যদি কেউ বলে তবে তাদের মধ্য দিয়ে না যেয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া উত্তম। সম্ভব না হলে অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।

৬৪। কারো কাছ থেকে কিছু নিলে তার বিনিময়ে কী করতে হয়?

কারো কাছ থেকে কিছু নিলে তার বিনিময়ে তাকে কিছু দিতে হয়। একজনের থেকে উপকার পেলে তাকে উপকার করব, একদিন কারো বাড়িতে দাওয়াত খেলে তাকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়ানো, একটি পেন নিলে তাকে একটি পেন বা অমন কিছু দেয়া, একজন পথ দেখিয়ে দিলে সালাম বা ধন্যবাদ দেয়া অথবা একটু হাসি দেয়া। চোখে-মুখে কৃতজ্ঞতার ছাপ ফুটিয়ে তোলা ইত্যাদি। এটা এক প্রকার ঋণ। তাৎক্ষণিকভাবে হোক আর অনেকদিন পরে হোক ঋণ পরিশোধ করতে হয়।

৬৫। পাশের লোকের দিকে কি খেয়াল রাখা অপরিহার্য?

একসাথে সকলে খাওয়া দাওয়া করছি একজন হয়ত কোন খাবার পেল না, বন্ধুদের মধ্যে নোট বন্টন করা হচ্ছে একজন পেল না, সবাই গাড়িতে উঠেছি একজন বাদ পড়ল এসব খেয়াল রাখা দরকার।

৬৬। ছোট-বড় সকলের কাজ কি সমান গুরুত্বপূর্ণ?

বড়দের কাজ বড়দের কাছে যেমন কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ছোটদের কাজ তেমনভাবে ছোটদের কাছে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ। ডিগ্রি শ্রেণির বড় ভাইয়ের কাছে তার পড়াশোনা যেমন কঠিন তৃতীয় শ্রেণির ছোট ভাইয়ের পড়া তার কাছে একই রকমের কঠিন। এজন্য ডিগ্রি পড়া বড় ভাই তার ছোট ভাইকে দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করাতে পারে না।

৬৭ কত পরিমাণ অর্থ ব্যয় করব?

আয় বুঝে ব্যয় করতে হয়। আর যার আয় নেই সে কি বুঝে ব্যয় করবে? ছেলে যত দিন চাকুরি না করে ততদিন বাবা-ভাইয়ের টাকায় তাকে চলতে হয়। তাকে এতটুকু বোঝা উচিত যে, আমি যে টাকা খরচ করি তা আমি রোজগার করি নি। মানুষ হবার জন্য তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা নিতে হবে। কিন্তু বিলাশবহুল জীবনযাপন করা ঠিক না। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে টাকা খরচ করলাম এটা ঠিক না। যারা আমাকে টাকা দিয়েছে তারা কেমন জীবনযাপন করে আর আমি কেমন জীবনযাপন করি? বাবা বাজারে হেঁটে যায় ছেড়া স্যান্ডেল পায়ে আর তার বেকার ছেলে রিক্সায় বাজারে যায় দামি জুতা পায়ে। বাবা খায় বাদাম ভাজা ছেলে খায় চাইনিজ। বেশি টাকা ব্যয় হবে তাই বড় ভাই হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার দেখায় আর সামান্য সর্দি লাগলে বড় ভাইয়ের থেকে টাকা নিয়ে ছোট ভাই যায় বিশেজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। এটা কি ঠিক? আহাম্মক আর কাকে বলে?

৬৮। কোন বিষয়ে প্রশ্ন করব কী করব না বুঝতে পারছি না, কী করব?

কোন কোন সময় এমন পরিস্থিতি হয় যে একটি বিষয় জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু জানতে চাইব কি না ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় চুপ করে থাকা ভাল। হয়ত কিছু সময় পর প্রশ্ন না করেও বিষয়টি জানা হয়ে যাবে। যেমন একটি বাড়িতে একটি লোক দেখলাম যার পরিচয় কেউ বলছে না। কিছুক্ষণ চুপ থাকলে হয়ত তার পরিচয় এমনিতেই জানতে পারা যাবে।

৬৯। মোবাইলফোনে কেমনভাবে কথা বলব?

নিজে মোবাইল করলে বা মোবাইল রিসিভ করলে প্রথমেই সালাম দিতে হবে। তারপর অন্যের কথা ভালভাবে শুনতে হবে ও নিজের কথা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। শেষে সালাম দিয়ে বা এমন কোন কথা বলে মোবাইল বন্ধ করতে হবে যেন অপর পক্ষ বুঝতে পারে যে, আমি মোবাইল রেখে দিচ্ছি। কথা বলার সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক কেটে গেলে যে প্রথমে মোবাইল করেছে সে আবার মোবাইল করবে। কথা শেষ হলে ফোন বন্ধ করা ভাল। একজনের সাথে মোবাইলে কথা বলছি এমন সময় আমার পাশে একজন লোক আছে যার সাথে মোবাইলে কথা বলছি সে লোকটিকে চেনে। এমন হলে তাকেও কথা বলার সুযোগ দেয়া ভাল। হ্যালো শব্দের পরিবর্তে সালাম বা নমস্কার ব্যবহার করা উত্তম। মোবাইল কোন খেলনা না। মোবাইল বাচ্চাদের কাছে দেয়া ঠিক না।

৭০। মোবাইলফোনে লোকের বিরক্ত করা কি ঠিক হয়?

বর্তমান যুগে যোগাযোগের উত্তম মাধ্যম মোবাইল। মোবাইলে বিরক্ত করা খুব গুনাহর কাজ। বিনা কারণে কারো কাছে মোবাইলে করা ঠিক না। বর্তমানে কমমূল্যে বা বিনামূল্যে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ থাকার ফলে কিছু লোক বিনা কারণে মিস কল দেয় বা কল দিয়ে কথা বলে। রাতে বা দুপুরে বা অন্য সময়ে লোকের ঘুম নষ্ট করে বা বিরক্ত করে। মোবাইল একটি দরকারি জিনিস। সব সময় মোবাইল খোলা রাখা দরকার এমনকি মোবাইলের সিম বারবার পাল্টানো ঠিক না। এতে যোগাযোগ করতে অনেক সময় সমস্যা হয়। কিন্তু বিরক্ত হবার কারণে অনেকে মোবাইল বন্ধ রাখে বা শব্দহীন করে রাখে। এতে অনেক শুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আদান-প্রদানে সমস্যা হয়। এক ভদ্রলোক মারা যাবার পর তার ভাইকে মোবাইলে খবর দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়। কারণ ঐ বিরক্তির কারণে লোকটি মোবাইল বন্ধ রেখেছিল। একজন হয়ত দুই একজনকে মোবাইলে বিরক্ত করল কিন্তু এ কথা শুনে অনেকে মোবাইল বন্ধ রাখল সব দায়ভার কি ঐ লোকের উপর পড়বে না? বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী এদের কাছে কোন অন্যায় করলে সেটা হয়ত পরে ক্ষমা চেয়ে নেয়া যায়। কিন্তু একজনের মোবাইলে বিরক্ত করলে পরে তাকে তো আর খুজে পাওয়া যাবে না। ক্ষমা চাওয়ার উপায় থাকবে না। কারো মোবাইলে বিরক্ত করলে পরকালে তাকে তো বিরক্ত করার বদলে নিজের নেকি দিতে হবে। বন্ধু মহলেও এমন কাজ করা ঠিক না।

৭১। ঝুঁকে দাঁড়িয়ে কাজ করা কি ঠিক হয়?

ঝুঁকে দাঁড়ানো বা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে কোন কাজ করা ঠিক না। শরীর সব সময় সোজা রাখতে হবে। জুতা পায়ে দেয়ার সময় বা খোলার সময় বসা উচিত। তেমনভাবে মাটিতে কাউকে কিছু দেখাতে গেলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে লাঠি বা কাঠির সাহায্যে দেখাতে হবে অথবা বসে হাত দিয়ে দেখাতে হবে। সোফা সেটের সামনে নাস্তা পরিবেশনের সময় সোফায় বসে নাস্তা পরিবেশন করতে হবে, তা না হলে মেঝের উপর হাঁটুতে ভর দিয়ে সোজা হয়ে বসে নাস্তা পরিবেশন করতে হবে। আমাদের দেশে উঠোন ঝাড়ু দেয়ার সময় যে ঝাটা ব্যবহার করা হয় তার লাঠি লম্বা রাখা দরকার যেন দাঁড়িয়ে ঝাড়ু দেয়া যায়। এতে কষ্টও কম হয়।

৭২। সীমার বাইরে কাজ করতে যাওয়া কি ঠিক?

একটি কাজ করার জন্য বারবার চেষ্টা করতে হয়। কাজ করতে গেলে ভুল হবে আবার ঠিক হবে। এভাবে মানুষ কাজ করতে শেখে। ছোট ছোট কাজ করতে করতে এক সময় বড় কাজ করতে শেখা হয়। রোম শহর একদিনে প্রতিষ্টিত হয় নি। বলা হয়, "একবার না পারলে দেখ শতবার"। নিজেকে ছোট ভাবা ঠিক না। আমার দ্বারা কিছু হবে না এমন ভাবা ঠিক না। কিন্তু সকলের দ্বারা সব কিছু হয় না। শতবার কেন কোটিবার চেষ্টা করলেও মানুষ লাফিয়ে চাঁদ ধরতে পারবে না। নিজের দক্ষতা যোগ্যতা বুঝতে পারাও একটি জ্ঞান। এমন কিছু করতে যাওয়া ঠিক না যা আমার দ্বারা একেবারে সম্ভব না।

যেসব স্থান থেকে উপকার পেয়েছি সেসব স্থানের কথা মনে রাখা কি প্রয়োজন হয়?

ছোট বেলায় যে গ্রামে বড় হয়েছি, যেখানে খেলাধুলা করেছি, যে স্থানে পড়েছি, যেখানে থেকেছি সকলের কথা মনে রাখতে হবে। সম্ভব হলে ঐ সব স্থানের লোকের জন্য কিছু করা ভাল।

৭৪। নিজের সাফল্যে কে বেশি খুশি হবে?

নিজের কোন সাফল্য হলে নিজের কাছে অবশ্যই ভাল লাগে। কোন সংবাদ ভাল হলে তা বলতে হয়। কিন্তু খুশির বহিঃপ্রকাশটা কম হওয়া ভাল। নিজে যতটুকু খুশি হব বা অন্যের কাছে বলব তার চেয়ে যদি অন্য লোকে বলাবলি করে তবে খুব ভাল। আর নিজের কোন ভাল কথা সব স্থানে বলতে যাওয়া ঠিক না। আমি কোন সফলতা অর্জন করলে লোকে আমাকে নিয়ে নাচাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখি যে সফলতা অর্জন করে সেই বেশি নাচানাচি করে। ফুটবল খেলার সময় যে গোল করল তাকে নিয়ে অন্যরা নাচাবে সে সুযোগ সে দেয় না নিজেই ডিগবাজি খায়। নিজের সাফল্যের কথা অন্য লোককে না বলতে দিয়ে নিজের কথা নিজে বলে অন্যের কান ঝালাফালা করে দেয়। অন্য লোককে আর কষ্ট করে প্রশংসা করার প্রয়োজন হয় না।

৭৫। যার কাছে কাজ তার কাছে যাব না নিজের কাছে ডেকে আনব? যার কাছে কাজ তার কাছে যাব নিজের কাছে ডেকে আনব না।

৭৬। ইচ্ছেমত কিছু হতে না পারলে কষ্ট পাওয়া কি ঠিক?

চেষ্টা করা মানুষের দায়িত্ব আর ফল প্রদান করেন সৃষ্টিকর্তা। সব কাজে সফলতা আসবে না। কিন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা না করলে পরে নিজের কাছে খারাপ লাগে। সৃষ্টিকর্তা ঠিক করেন কাকে কি দেবেন কাকে দিয়ে কোন কাজ করাবেন। এ পৃথিবীটা চালাতে সব ধরণের লোকের প্রয়োজন। সকলে এক রকম হলে তো পৃথিবী চলবে না। সকলে রাজা হলে প্রজা হবে কে? এজন্য কোন কিছু না হতে পারলে যেমন খুব দুঃখের কিছু নেই তেমনভাবে কোন কিছু হতে পারলে মহাখুশির কিছু নেই। পাওয়া না পাওয়ার মাঝে অনেক দূর কিন্তু সে বাস্তবতা মেনে নিতে পারাটা বুদ্ধিমানের লক্ষণ।

৭৭ আমি ভাল হব না অন্যকে ভাল করব?

আমি ভাল হব। প্রত্যেকে নিজে নিজে ভাল হলে সমস্ত পৃথিবীটা ভাল হয়ে যাবে। আমরা অন্য লোকের প্রশংসা করি, ভাল বলি অর্থাৎ ভাল হওয়া যে ভাল কাজ তা বুঝি। কিন্তু যাদের প্রশংসা করি তাদের মত হওয়ার চেষ্টা করি না। যাকে পছন্দ করি, যার গুণাগুণ ভাল লাগে তার মত হওয়ার চেষ্টা করব। কারো কথা বলা, কারো পোশাক পরা, কারো ব্যবহার, কারো কর্মদক্ষতা, কারো সততা আমাদের মুগ্ধ করে। তাদের ঐসব বিষয়ে মুগ্ধ হলেই হবে না সব গুণ নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা করব। যথাসাধ্য চেষ্টা করব। সব গুণ আয়ত্তে না আনতে পারলেও কিছু তো পারব। এটা অবশ্যই আমার প্রতিজ্ঞা হওয়া দরকার।

৭৮। বন্ধুদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক হওয়া দরকার?

বন্ধুত্ব মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য অংশ, সব বয়স ও পেশার লোক বন্ধু নিয়ে চলে। বন্ধুত্বের কোন সীমা থাকে না। বন্ধুদের মধ্যে সকলে এক মন-মানসিকতা সম্পন্ন হয় না। এজন্য সকল বন্ধুকে সব কাজে জড়ানো ঠিক না। একজন হয়তো ভ্রমণ পছন্দ করে না তাকে জোর করে ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া ঠিক না। বন্ধুরা সিনেমায় যাবে একজন যেতে চায় না তাকে বাদ দেয়া ভাল। প্রত্যেককে নিজ নিজ চিন্তা-ভাবনা নিয়ে চলতে দেয়া ভাল। বন্ধুরা সকলে মিলে একজন খারাপ বন্ধুকে ভাল করতে পারে। কিন্তু ভাল বন্ধুকে খারাপ দিকে নেয়া অন্যায়। বড় হওয়ার পর কোন ভুল করলে অন্য লোকে বলে না কিন্তু একবন্ধু আর একবন্ধুর ভুল ধরিয়ে দেয়। ভুল ধরার ক্ষেত্রে বন্ধুরা খুব উপকার করতে পারে।

একবন্ধু হয়ত ধূমপান করে তার উচিত নিজে ধূমপান ত্যাগ করা এবং অন্য বন্ধুরা যেন এমন কাজ না করে তা তাদের বোঝানো। একবন্ধু অন্য বন্ধুকে ক্ষতি করলে সেটা বন্ধুসুলভ আচরণ হয় না।

৭৯ বন্ধুমহলে নিজের সতর্কতা কি অপরিহার্য?

বন্ধুদের মধ্যে অনেক ধরণের লোক থাকে। সকলের আচার-ব্যবহার, চিন্তা-ভাবনা, কাজ-কর্ম এক রকম হয় না। ভাল-মন্দ মিলে একটি বন্ধু দলের সৃষ্টি হয়। বন্ধুদের সাথে চলব কিন্তু নিজের মত চলব। বন্ধুরা যখন ভাল কাজ করবে তখন তাদের সাথে থাকব আর যদি খারাপ কাজ করে তখন তাদের সাথে থাকা ঠিক হবে না। ভাল বন্ধুর সাথে বেশি মিশব। বন্ধুরা যদি নিজের মতের চেয়ে অন্য মতে চলে তবে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করব। বন্ধুত্ব রক্ষা করতে যেয়ে বিবেক বিসর্জন দেয়া যাবে না।

৮০ সকল বন্ধুর দিক বিবেচনা করা কি প্রয়োজন?

বঙ্গ দর মধ্যে দূরের-কাছের, ধনী-দরিদ্র সব ধরণের লোক থাকে। কোন কাজ করার সময় দেখতে হয় কারো যেন সমস্যা না হয়। তিন দিনের ভ্রমণে সকলে যেতে পারবে না এক দিনের ভ্রমণে যাব। পাঁচশত টাকা চাঁদা সকলেই দিতে পারবে না, একশত টাকা নেব। কিন্তু যথাসম্ভব সকলের দিক বিবেচনা করব।

৮১। খেলাধুলার ক্যাপ্টেন হবার জন্য কি ঝগড়া করা যায়?

খেলা করার সময় একজন ক্যাপ্টেন হয়ে থাকেন। শিক্ষকরা, এলাকার বড়রা বা খেলোয়ারগণ নিজেরা ক্যাপ্টেন নির্বাচন করেন। ক্যাপ্টেন হবার জন্য বেশি উৎসাহ দেখানো এবং ক্যাপ্টেন না হতে পারলে রাগ করা ঠিক না। যে ক্যাপ্টেন হবে তাকে মান্য করতে হবে।

৮২। লাইব্রেরিতে কেমনভাবে পড়াশোনা করতে হবে?

লাইব্রেরির নিয়ম মেনে চলব। পাঠকক্ষে পড়ার জন্য বই নিলে তা ফেরত দিতে হবে। বাড়িতে নেওয়ার জন্য বই নিলে সময়মত ফেরত দিতে হবে। অন্যের উদাহরণ দেয়া ঠিক না। একজন হয়ত খারাপ তার জন্য আমি কেন খারাপ হব? অনেক সময় নিজে লাইব্রেরির বই নিয়ে বন্ধুকে দিয়ে থাকি। এতে বন্ধুর উপকার হয়। বই নিয়ে যে অনিয়ম হয় বা বইটা যদি ফেরত না দেয়া হয় তবে বন্ধুর যে গুনাহ হবে তার চেয়ে অনেক বেশি গুনাহ হবে আমার। আমি গুনাহ করে বন্ধুর উপকার করব এমন বোকামি কেন করতে যাব? তাছাড়া লাইব্রেরির বই নিয়ে তা সময়মত ফেরত না দিয়ে বাড়িতে রাখলে ছোট ভাই-বোনেরা বিষয়টা বুঝতে পারে এবং তাদের অভ্যাসও খারাপ হতে পারে। তারা বড় ভাইয়ের শ্রদ্ধা করতে পারে না। এমনকি পরে নিজের বাচ্চারা এমন খারাপ কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আর এত সব গুনাহর ভাগী আমাকে হতে হবে। এসব কাজ করা কখনও ঠিক না। আর যদি ভুল ক্রমে এমন কাজ হয়ে যায় তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সমাধান করতে হবে।

অনেক সময় বন্ধুমহলে বা আত্মীয়দের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে যেয়ে লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে তাদের দিয়ে থাকি কিন্তু আত্মীয় বা বন্ধুদের উচিত এমন দাবি না করা। আর যদি এমন দাবি আসে তবে আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব রাখব না নিজের পরকাল নষ্ট করব তা ভাবতে হবে। এমন খারাপ কাজ লাইব্রেরিতে একজন করলে তা দেখে অন্য ছাত্ররা শিক্ষা নিয়ে থাকে। তাদের পাপের ভাগ কি প্রথমজনকেও বহন করতে হবে না?

৮৩ একজন ছাত্র শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করল, ফলাফল কী হবে?

না বুঝে ছাত্ররা অনেক সময় শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করে থাকে। পরে হয়ত ক্ষমা চায়। একজন ছাত্র এমনভাবে একজন শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করে। ছাত্রটি পরে কীভাবে যেন অন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রটির অনুশোচনা হয়। মনে করে শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করার জন্য হয়ত আমার এমন অবস্থা হয়েছে। শিক্ষকের কাছে এসে ক্ষমা চায়। শিক্ষক তার জন্য দোয়া করেন। কিন্তু ছাত্রটি বেয়াদবি করে ভাংচুর করে তা অনেক ছাত্র দেখেছে ও তারা বেয়াদবি করতে শিখেছে তারা আবার বেয়াদবি করবে। এসব দোষ কি প্রথম ছাত্রটিকে বহন করতে হবে না? শিক্ষক কি এসব গুনাহ থেকে ছাত্রটিকে মুক্ত করতে পারবেন? এমন ঘটনা ঘটলে শিক্ষকরা কাজে, পাঠদানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। শিক্ষকরা যদি মন দিয়ে লেখাপড়া না করান তবে ছাত্ররা তা আদায় করে নিতে পারবে না। পরিবেশ ভাল রাখার জন্য ছাত্রদের সব সময় চেষ্টা করতে হবে।

৮৪। কাজ করার সময় বিবেক-বুদ্ধির সংমিশ্রণ কীভাবে ঘটাবে?

নিজের বুদ্ধিতে যে কাজটি ভাল মনে হয় সে কাজটি করব আর যে কাজটি ভাল মনে না হয় তা করব না।

৮৫। কারো সাথে ভুল বোঝাবুঝি হলে কী করব?

কারো সাথে কোন ব্যাপারে ভুল বোঝাবুঝি হলে বা ঝগড়া হলে সব সময় নিজের দোষ খুজতে হবে। নিজে কীভাবে কাজ করলে ঝগড়া এড়ানো যেত সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।

৮৬। ছোটদের সামনে বড়রা নিজেদের অন্যায়ের কথা আলোচনা করা ঠিক?

ছোটদের সামনে বড়রা যদি নিজেদের অন্যায়ের কথা আলাপ করে তবে খুব ভুল করে। ছোটরা সব সময় বড়দের অনুকরণ করে। বড়দের কোন কথায় ছোটদের যে কত ক্ষতি হতে পারে তা আমরা চিন্তা করি না। আমরা ছোটদের সামনে গল্প করি, "একদিন অমুকের গাছের ডাব চুরি করে খেয়েছিলাম, বাস ভাড়া দিয়েছিলাম না, বাজারে কম টাকা দিয়েছি, পরীক্ষা হলে অন্যের খাতা দেখে লিখেছি" ইত্যাদি। এসব করলে বাচ্চাদের খুব ক্ষতি করা হয়। বড়দের এসব কথা শুনে ছোটরা অন্যায় করলে ছোটদের সাথে বড়রাও দায়ী হবে।

৮৭। একজনের ভাল এবং মন্দ এ দুয়ের মধ্যে কোনটা আগে বলা উচিত?

ভাল আর মন্দ মিলে মানুষ। ভাল দিকগুলো আগে বলা উচিত। মন্দ দিকগুলো নাই-বা বললাম। কোন ব্যক্তিকে নিয়ে সকলে যখন আলোচনা করছে তখন আমি শুধু তার ভাল দিকগুলোর কথা বলব। আর মন্দ দিক যদি বলতেই হয় তবে সবশেষে বলব। একটি পাত্র দেখার পর বাড়িতে এসে প্রথমে বলে ছেলেটা বেশি লাজুক। বেশি লাজুক ছেলেটার হয়ত খারাপ দিক। কিন্তু তার আরো অনেক ভাল দিক আছে। যেমন- বলা যেত ছেলেটা ভদ্র, ভাল চাকুরি করে, গায়ের রং ভাল, ব্যবহার ভাল, বুদ্ধিমান, ভাল পরিবার তবে একটু লাজুক প্রকৃতির।

৮৮। পরিচিত লোকের কাছ থেকে কিছু কিনলে বা সেবা নিলে তাকে কি টাকা দেব?

পরিচিত লোকের কাছ থেকে অনেক সময় আমরা কেনাকাটা করি। পরিচিত গরিব লোক দিয়ে বাড়ির কাজ করাই। রিক্সাওয়ালা ভ্যানওয়ালার সেবা গ্রহণ করি। ডাক্তারের সেবা নিয়ে থাকি, এদের সকলের ন্যায্য টাকা দেয়া উচিত।

৮৯। কাউকে কি বেশি প্রশংসা করা ভাল?

কোন লোক ভাল কাজ করলে তাকে অবশ্যই প্রশংসা করা ভাল। এতে লোকটি আনন্দ পাবে। ভাল কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবে। কিন্তু এমনভাবে তাকে প্রশংসা করা ঠিক না যে সে নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করে।

এতে মানুষের মধ্যে সৃজনশীলতা নষ্ট হয়। পরে লোকটির ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত প্রশংসা করলে লোকে নিজের ভুল বুঝতে পারে না।

৯০। কারো ক্ষতি হয় এমন কাজ কি তাকে দিয়ে করানো ঠিক হয়?

অনেক ক্ষেত্রে আমরা অন্য লোক দিয়ে কাজ করিয়ে থাকি। কিন্তু ঐ কাজ করতে গেলে যদি লোকটির কোন সমস্যা হয় বা ক্ষতি হয় তবে তাকে দিয়ে সেই কাজ করানো মোটেও ঠিক না। নিজের ঝামেলা অন্যের উপর চাপানো ঠিক না।

৯১। চিন্তা-ভাবনা কি অবশ্যই ইতিবাচক হতে হবে?

কাজ করার আগে ভাল ফল পাওয়া যাবে না এমন ভাবা ঠিক না। কাজ ভালভাবে করতে হবে তার পর সৃষ্টিকর্তা যদি ভাল ফল দেন তবে ভাল, আর ভাল ফল না দিলে আমাদের কি-বা করার আছে? কাজটা অবশ্যই ভালভাবে করতে হবে। কাজটা করতে ভালভাবে চেষ্টা না করলে পরে নিজের কাছে খারাপ লাগে। আর চেষ্টা করেও ভাল ফল না পেলে কষ্টের কিছু থাকে না। প্রথমে মনে করতে হবে আমরা ভাল ফল পাব।

৯২। অপচয় করা কি ঠিক?

অপচয় করা একটি অন্যায় কাজ। একটি লোক অনেক খাবার খেলেও কেউ কিছু বলে না। কিন্তু অল্প খাবার নিয়ে নষ্ট করলে লোকে খারাপ বলে। যে জিনিস লাগবে তার চেয়ে বেশি চাওয়া ঠিক না। যেমন- ব্যাংকে গেলাম, টাকা জমা দেয়ার একটি বই হলেই চলে দুটো নিয়ে আসলাম। এটা ঠিক না। আর যদি কখনও কোনভাবে নিয়ে আসি তবে সেটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।

৯৩। সব সময় ন্যায্য কথা বলা কি ঠিক?

ন্যায্য কথা বলা ভাল তবে সব সময় না। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হয়।

৯৪। কারো থেকে উপকার পেলে তার প্রতি কি কৃতজ্ঞ থাকা দরকার?

মানুষ জীবনে একে অপরকে উপকার করবে এটা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে আমরা একে অপরকে ধন্যবাদ দিয়ে থাকি বা অন্য কোনভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কিন্তু কারো কাছ থেকে যদি বিশেষ কোন উপকার পাওয়া যায় সেটা চিরদিন স্মরণ রাখতে হবে। যে উপকার করেছে তার উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উপকার পাওয়ার বিষয়টি বারবার আলোচনা করতে হবে। অনেকদিন পরে হলেও এমন কিছু করতে হবে যেন লোকটা বুঝতে পারে সত্যিই আমি তাকে মনে রেখেছি।

৯৫। সব পরিবেশে মানুষের পেশা নিয়ে কথা বলা কি ঠিক?

নিজের পেশা অন্যস্থানে আলোচনা করা হোক তা সকলে পছন্দ করে না। একজন লোক বিক্রয় কর্মী হিসাবে একটি দোকানে কাজ করে। পথে তার সাথে দেখা হল। লোকটি তার বন্ধু বা পরিবার নিয়ে আছে বা সাধারণভাবে অনেক লোকের সাথে আছে। এ সময় তার পেশা নিয়ে আলোচনা করা ঠিক না। লোকটি যদি নিজে আলোচনা করে তবে ভিন্ন কথা।

৯৬। অন্যায়ের বদলা কি অন্যায় হতে পারে?

একজন এমন একটি কাজ করল যেটা আমার জন্য ক্ষতিকারক বা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে, আমাকে ঠকাতে পারে তার বিনিময়ে আমিও যদি তার সাথে অমন কিছু করি তবে তার আর আমার মধ্যে পার্থক্য কি থাকল? সে যেটা করেছে সেটা তার ব্যক্তিত্বের ব্যাপার। আমি যা করব সেটা আমার ব্যক্তিত্বের ব্যাপার।

৯৭। পুরনো জিনিস কি সকলকে দেয়া ঠিক হয়?

নিজের ব্যবহৃত বা কোন পুরনো জিনিস আমরা গরিব লোকদের দিয়ে থাকি। কিন্তু গরিব বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের এসব জিনিস দেয়া ঠিক না। আর দিলেও গোপনে তাদের মতামত নিয়ে দিতে হবে। তাদের নতুনটা দেয়া ভাল।

৯৮। একজন একটি লাভজনক কাজ করছে সকলে কি সেদিকে যাওয়া ঠিক?

প্রথমে কেউ কোন কাজ করলে তার জন্য লোকটির বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া উচিত। একজন কোন কাজ শুরু করল তাতে তার লাভ হচ্ছে বা লোকটি সুনাম অর্জন করছে দেখে সকলে সে দিকে যাওয়া ঠিক না। একটি ব্যবসা করে বা কোনো কাজ করে কেউ লাভবান হচ্ছে সকলে সে দিকে গেলে প্রথম ব্যক্তি কষ্ট পায় এবং পরে হয়ত কারো আর লাভ হয় না। একজন একটি কাজ করছে করুক আমি আর একটি কাজ করি।

৯৯ একজনের অন্যায়ের শাস্তি কি অন্যজন পাবে?

যে অন্যায় করে তার শাস্তি সে নিজে পাবে। একজনের অন্যায়ের কারণে অন্যজন শাস্তি পেতে পারে না। একজন উকিল যদি বিচারকের সাথে খারাপ ব্যবহার করে তবে বিচারক ঐ উকিলের মক্কেলের প্রতি অবিচার করতে পারে না। মালিক বেতন দেয় নি, একটি গাড়িতে লোক মারা গেছে, তাই অন্য গাড়ি ভাংচুর, অবরোধ, এসব হতে পারে না।

১০০। যাদের টাকা দিতে হবে সেক্ষেত্রে কি বিলম্ব করা ঠিক?

যাদের টাকা দিতে হবে তাদের টাকা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়া দরকার। শুধু টাকা না যে জিনিস অন্যকে দিতে হবে তাড়াতাড়ি তা দিয়ে দেয়া উচিত। বাসে চলার সময় কন্ট্রাকটরকে আমরা বলি, "সকলের টাকা নেন আমারটা পরে দেব" এটা ঠিক না। পেপার বিল, নাইট গার্ডের টাকা এসব চাওয়া মাত্র দেয়া উচিত। অনেক সময় আমাদের কাছে টাকা থাকে কিন্তু অহেতুক বিলম্ব করি এটা মোটেও ঠিক না। আমরা টাকা দিলে সে ঐ টাকা আর একজনকে দেবে, সে আবার অন্যজনকে দেবে। এজন্য সব সময় দ্রুত টাকা পরিশোধ করা উত্তম। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অবহেলা করে দেরি করলে দায়ী হতে হবে। আমরা এদের টাকা শোধ করলেই মনে করি ঠিক হল। কিন্তু তাদের দেরি করালে তার জন্য অনেক লোকের ক্ষতি হয় এর জন্য দায়ী হতে হবে। ঘরে বা ব্যাংকে টাকা আছে এবং লোকে টাকা পাবে তবে আমরা কীভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি? অন্যের টাকা নিয়ে ব্যবসা করলাম আর লোকটি ব্যবসা করতে পারল না, অন্যের টাকা নিয়ে জমি কিনলাম আর লোকটি জমি কিনতে পারল না এর ফলাফল পরকালে কি হবে তা ভাবতে হবে। আমি যদি একঘন্টার জন্য দেনা থাকি তবে ঐ একঘন্টা আমার জন্য দুশ্চিন্তার, ঐ একঘন্টা আমার জন্য লজ্জার, ঐ একঘন্টার আমার ইহকাল ও পরকালের সমস্যা। পাওনাদার দেখলে লজ্জা লাগে না এ কেমন নির্লজ্জতা?

No comments:

Post a Comment