বিভিন্ন আকৃতি বিভিন্ন উক্তি
কাযী আবূ ইয়ালা আল-ফারা বলেছেনঃ জ্বিনদের আকার-আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয় কিন্তু শরীরের গঠনে একে অপরের সাথে মিল থাকে এবং এ-তথ্য ঠিক যে জ্বিনরো সূক্ষ্মদেহী, আবার এ কথাও ঠিক যে ওরা স্থূলদেহী। কিন্তু মুতাযিলা সম্প্রদায় এ মতের বিরোধী। ওঁদের মতে, জিনদের দেহ স্থুল নয় সূক্ষ্মই এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম বলেই আমরা ওদের দেখতে পাই না।
জ্বিনদের দেখা যেতে পারে
কাযী আবূ বাকর বাকিলানী (রহঃ) বলেছেন: আমি বলছি, যেসব মানুষ জ্বিনদের দেখেছে, তারা প্রকৃতই দেখেছে। কেননা আল্লাহ তা'আলা জ্বিনদের দৃশ্যরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আল্লাহ যেসব জিনিসের দৃশ্যরূপ সৃষ্টি করেননি তাদের কেউ দেখতে পারে না। এই জ্বিনেরা বিভিন্ন আকৃতির ও কোমল দেহ বিশিষ্ট হয়।'
জ্বিনদের শরীর সূক্ষ্ম
অধিকাংশ মুতাযিলা বলেনঃ জ্বিনদের শরীর সূক্ষ্ম এবং অবিমিশ্র। কাযী আবু বাকর বাকিলানী (রহঃ) বলেছেনঃ আমাদের কাছে ওই মতও গ্রহণযোগ্য, যদি ওই বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের কোনও প্রমাণ আমরা পেয়ে যাই, কিন্তু এমন কোনও প্রমাণ আছে বলে আমাদের জানা নেই।
আমি (আল্লামা জালাল উদ্দীন সুযুতী (রহঃ) বলছিঃ ইমাম মুসলিম (রহঃ) হযরত আয়িশা (রাঃ)-র বাচনিকে উল্লেখ করেছেন যে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
ফিরিশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে অনুপম জ্যোতি (নূর) দিয়ে, জ্বিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে ধোঁয়াহীন আগুনের শিখা দিয়ে এবং আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে তাই দিয়ে যার কথা (পবিত্র কোরআনে) তোমাদের বলা হয়েছে (অর্থাৎমাটি(১)
আল্লাহ বলেছেনঃ
(এবং জ্বিনকে তিনি 'অগ্নিশিখা' থেকে সৃষ্টি করেছেন।)
এই আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) 'মা-রিজিম্ মিন্ না-রা এর অর্থ করেছেন অগ্নিশিখা। (২), এবং হযরত মুজাহিদ (রহঃ) আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে বলেছেনঃ জ্বিন সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের হলুদ ও সবুজ শিখা দিয়ে, যা দেখা যায় আগুন দাউদাউ করে জ্বলার সময়, উপরের স্তরে। (৩) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ ইবলীস ছিল ফিরিশ্তাদের গোত্রগুলির মধ্যে একটি গোত্রের অন্তর্গত, যে গোত্রকে ‘জ্বিন' বলা হত। ফিরিশ্তাদের এই গোত্রকে সৃষ্টি করা হয়েছে অত্যুষ্ণ বায়ু (লু)-র আগুন দিয়ে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) আরও বলেছেনঃ যেসব জ্বিনের কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওদের সৃষ্টি করা হয়েছে নির্ঘুম অগ্নিশিখা থেকে।(৪)
জ্বিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে সুন্দর আগুন দিয়ে
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন :
(আমি আদমের আগে জ্বিন সৃষ্টি করেছি ‘লু’র আগুন দিয়ে) (৫)
এই আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ জ্বিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই সুন্দর আগুন দিয়ে। (৬)
জ্বিন সৃষ্টি নরকাগ্নির ১/৭০ অংশ দিয়ে
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ যা দিয়ে জ্বিন সৃষ্টি করা হয়েছে সেই 'লু' এর আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের এক ভাগ এবং এই দুনিয়ার আগুন 'লু' এর আগুনে ৭০ ভাগের এক ভাগ। (৭)
জ্বিন ও শয়তানরা সূর্যের আগুনে সৃষ্টি হযরত উমার বিন দীনার (রহঃ) বলেছেনঃ জ্বিনজাতি ও শয়তানের সৃষ্টি করা
হয়েছে সূর্যের আগুন থেকে । (৮)
প্রমাণসূত্রঃ
(১) সহীহ্ মুসলিম, কিতাবুয যুহদ, হাদীস নং ৬০। মুসনাদে আহমাদ, ৬ঃ ১৫৩, ১৬৮। জামিই সগীর, হাদীস নং ৩৯৩৬। মুজমাঅ, ৮ঃ ১৩৪। দুররে মাসূর, ৬:১৪৩। মিশকাত, ৫৭০১। মুসান্নিফে আব্দুর রায্যাক, ২৯০৪। আল হাবায়িক ফী আখবারিল মালায়িক, ৯ ৷ যাদুল মাইয়াস্সার, ৩:৩৯৯, ৫:৩৪৭। তাফসীর ইবনে কাসীর, ৩০ ৩৮৮; ৫:১৬৩; ৭: ৪৬৭। তাফসীর কুরতুবী, ১০:২৪। আল আসমা অস্ সিফাত, ৩৪৩; ৩৮৬। বিদাইয়াহ্ অন্-নিহাইয়াহ্, ১ঃ ৫৫৪;৫৫৫। তারীখে জুরজান, ১০৩। তাহযীবুত্ তারীখ, ইবনে আসাকির, ২ঃ ৩৪৩।
(২) ফারইয়াবী। ইবনে জারীর। ইবনুল মুন্নযীর। ইবনে আবী হাতিম ।
(৩) ফারইয়াবী। আবদ্ বিন হামীদ।
(৪) তাফসীরে ইবনে জারীর ত্ববারী।
(৫) সূরা আল-হিজর, আয়াত ২৭।
(৬) ইবনে আবী হাতিম ।
(৭) ফারইয়াবী। ইবনে জারীর। ইবনে আবী হাতিম। ত্ববরানী। হাকিম। ও সিহাহ্। শুআবুল ঈমান, বায় হাকী ।
(৮) ইবনে, আবী হাতিম ।
No comments:
Post a Comment