আগুন আর মাটি
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেছেনঃ
السموم نار من قبل من خلقناه والجان
আমি আদমের আগে জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি 'লু'-এর আগুন (অর্থাৎ অত্যন্ত সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য অতুষ্ণ বায়ুতে পরিণত হয়েছে এমন আগুন) দিয়ে। (১)
(২) তিনি জ্বিনকে সৃষ্টি করেছেন বিশুদ্ধ (ধোঁয়াবিহীন) আগুনের শিখা থেকে । (২)
(৩) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সময় ইবলীস বলেছে-
طين من وخلقته نار من خلقتني
আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন দিয়ে এবং (আদম)-কে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দিয়ে। (৩)
আগুনের তৈরি জ্বিনকে আগুন জ্বালাবে কী ভাবে
আবুল ওয়াফা ইবনে আকীল বলেছেনঃ এক ব্যক্তি জ্বিনদের সম্পর্কে প্রশ্ন করল- আল্লাহ্ তা'আলা জ্বিনদের বিষয়ে বলেছেন যে ওদের আগুন থেকে সৃষ্টিকরা হয়েছে এবং এও বলেছেন যে উল্কা ওদের ক্ষতি করে এবং জ্বালিয়েও দয়-তা আগুন আগুনকে কী ভাবে জ্বালায়?
উত্তরঃ আল্লাহ্ তা'আলা জ্বিনজাতি ও শয়তানদের আগুনের সাথে সম্বন্ধযুক্ত করেছেন ওই অর্থে, যে অর্থে মানুষকে সম্পৃক্ত করেছেন মাটি, কাদা ও শুকনো ঝন্ঝনে মাটির সাথে। অর্থাৎ মানুষ সৃষ্টির মূল উপাদান কাদামাটি হলেও মানুষ
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কাদামাটি নয়। তেমনই জ্বিনরাও আগুনের উপাদানে সৃষ্ট কিন্তু জ্বিন মানেই আগুন নয়।
‘এর প্রমাণ রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এই বাণীঃ
শয়তান নামাযের মধ্যে আমার মুকাবিলা করেছে তো আমি তার গলা টিপে দিয়েছি এবং তার থুতুর শীতলতা নিজের হাতে অনুভবও করেছি। (৪)
সুতরাং যে স্বয়ং দাহ্য আগুন হবে তার থুতু ঠাণ্ডা হতে পারে কেমন করে! বরং তার থুতু তো না হবারই কথা। আশাকরি আমার বক্তব্যের যথার্থতা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
রসূলুল্লাহ (সাঃ) - ঐ থুতুকে এমন পানির সাথে উপমা দিয়েছেন যা কুয়া খোঁড়ার সময় বের হয়। কিন্তু যদি ওরা আগুনরূপী হত, তাহলে তিনি ওদের আকার-আকৃতি তথা অগ্নিশিখা, ও জ্বলন্ত অঙ্গারের কথা উল্লেখ করেননি কেন! কাযী আবূ বাকর বাকিলানী বলেছেনঃ জ্বিনজাতি আগুন থেকে সৃষ্টি হবার কারণে আমরা এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করি না যে আল্লাহ্ তা'আলা ওদেরকে (মানুষের সমাজে) প্রকাশ করবেন, ওদের শরীর স্থূল করে দেবেন, ওদের মধ্যে এমন গুণাবলী সৃষ্টি করবেন, যেগুলি আগুনের গুণ বা ধর্মের চেয়ে অতিরিক্ত হবে, ফলে ওরা নিজেদের আগুন হওয়া থেকে অতিক্রম করে যাবে এবং আল্লাহ্ বিভিন্ন আকার-আকৃতিও সৃষ্টি করবেন ওদের জন্যে ।
প্রমাণসূত্রঃ
(১) সূরাহ্ আল্-হিজরঃ আয়াত ২৭।
(২) সূরাহ্ আর-রহমানঃ আয়াত ১৫।
(৩) সূরাহ্ আল-আরাফ: আয়াত ১২।
(৪) মুসনাদে আহমাদ, ৫ঃ ১০৪,১০৫। দালায়িলুন নুবুওয়ত, বাইহাকী, ৭:৯৯। ফাহুল বারী, ৬ঃ ৪৫৭। বুখারী। মুসলিম। দুররুল মাসূর, ৫ঃ ৩১৩। সুনান আল্-কুরা, বায়হাকী, ২ঃ ২১৯। কানযুল উম্মাল, ১২৮৬।
No comments:
Post a Comment