প্রথমত, ভাষাগত পার্থক্য। স্বাভাবিকভাবেই ফর্মাল কমিউনিকেশনে আমরা মূলক মার্জিত ভাষা ব্যবহার করি। সেখানে আঞ্চলিক ভাষা বা আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার কিংবা ট্রেন্ডি ক্যাচ ফ্রেইজ গুলো একেবারেই ব্যবহার করা হয় না।
দ্বিতীয়ত, কমিউনিকেশনের স্ট্রাকচার বা কাঠামো। ফরমাল কমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে বাঁধাধরা কিছু কাঠামো বা নিয়ম রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন অফিস বা বিজনেস অর্গানাইজেশনে ব্যবহার করা হয়। যেমন, একটা মিটিং এর স্ট্রাকচার। বিজনেস মিটিং বা অফিশিয়াল মিটিং- ফরমাল কমিউনিকেশন এর উদাহরণ। এবং এই কমিউনিকেশন করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ অফিসেই একটা সুনির্দিষ্ট কাঠামো ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ইনফর্মাল কমিউনিকেশন তেমন কোনো structure মেনে চলে না। একটি ইনফরমাল কমিউনিকেশন কেমন হবে এটা যাদের মধ্যে কমিউনিকেশন হচ্ছে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে, আবার কখনো সিচুয়েশনের উপরও নির্ভর করে। ইনফরমাল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অল্প পরিচিত মানুষের সাথে অতিরিক্ত সহজভাবে কথা বলা, গায়ে হাত রেখে কথা বলা, তাদের ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করা বা মন্তব্য করা- এগুলো অনেকসময় বিরক্তি বা বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তৃতীয়ত, কমিউনিকেশনের দৈর্ঘ্যঃ ফরমাল কমিউনিকেশন যতটুকু সম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং to the point রাখতে হয়।
সেখানে খুব বেশি কুশল বিনিময়ের সুযোগ নেই। অন্যদিকে, ইনফরমাল কমিউনিকেশনের দৈর্ঘ্য তুলনামূলক বড় হয়। তবে সেটাও কার সাথে কমিউনিকেট করছেন, তার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন এবং বর্তমান পরিস্থিতি কেমন তার ওপর নির্ভর করবে।
কমিউনিকেশন কতটুকু সরাসরি হবে তার ওপর নির্ভর করেই কমিউনিকেশন কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ডিরেক্ট কমিউনিকেশন এবং ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন। সহজ ভাষায় ডিরেক্ট কমিউনিকেশন বলতে বোঝায় আপনি যা মিন করছেন সরাসরি তাই বলা। সেই কথাটি কে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য ভাষায় বলাই হলো ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন।
ডিরেক্ট কমিউনিকেশন এবং ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশনের মধ্যকার সম্পর্ক কিন্তু একদম বাইনারি নয়। মানে কোনো একটি কমিউনিকেশন একদম ডিরেক্ট হবে বা একদম ইনডিরেক্ট হবে এটা নাও হতে পারে। ব্যাপারটা একটা স্পেকট্রামের মত। অর্থাৎ কিছু কমিউনিকেশন একটু বেশি ডিরেক্ট, কিছু কমিউনিকেশন একটু কম ডিরেক্ট এমনটা হতে পারে।
প্রফেশনাল কমিউনিকেশনের জন্য ডিরেক্ট কমিউনিকেশন বেশি প্রযোজ্য। আপনার বস যদি আপনাকে একটা ইমেইল ড্রাফট করে আনতে বলেন, সে ক্ষেত্রে সেটা সরাসরি বলাই ভালো। এখানে ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন করতে গেলে বরং সময় নষ্ট হবে, কনফিউশন সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ধরুন, আপনি তাকে বললেন, “এই ইমেইলটি ড্রাফ্ট হওয়া দরকার।” এখন ইমেইল টা আপনি তাকে ড্রাফ্ট করতে বলেছেন নাকি অন্য কাউকে ড্রাফ্ট করতে বলেছেন এটা কিন্তু স্পষ্ট হলো না। এই ধরনের কনফিউশন এড়িয়ে চলার জন্যই অফিসে ডিরেক্ট কমিউনিকেশন প্রেফার করা হয়।
এর বেশ কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। অফিসের বেশ কিছু জটিল পরিস্থিতি আপনাকে ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন দিয়ে সমাধান করতে হতে পারে। ধরুন আপনার দুজন সহকর্মীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না। সব সময় ঝগড়া লেগেই আছে। এক্ষেত্রে আপনি যদি সবার সামনে বলেন যে “আমাদের পারস্পরিক বন্ডিং এবং টীম বিল্ডিং টা যত বেশি স্ট্রং হবে আমাদের প্রতিষ্ঠান ততবেশি সামনে এগিয়ে যাবে। তাই আসুন আমরা পরস্পরের সাথে co-operate করে প্রবলেম গুলো সল্ভ করতে চেষ্টা করি।” এখানে আপনি সরাসরি দুজন ব্যক্তিকে কিছু বলেননি, কিন্তু ইঙ্গিত এর মাধ্যমে তাদেরকে তাদের সমস্যা সমাধান করে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
অনেক ক্ষেত্রে ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশন পোলাইটনেস বা ভদ্রতা প্রকাশ করে। ধরুন আপনি অফিসে বসে আপনার কলিগের সাথে কোনো একটা বিষয় ব্রেইনস্টর্ম করছেন। দুজন মিলে আইডিয়া বের করার চেষ্টা করছেন। এখন আপনার কলিগ একটা আইডিয়া দিল। আইডিয়াটা আপনার খুব একটা পছন্দ হয়নি। এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন, "হ্যাঁ আপনার আইডিয়াটা বেশ সুন্দর কিন্তু আমাদের সমস্যার সাথে এটা কতটুকু খাপ খাবে আমি ঠিক নিশ্চিত না। আমরা কি আরো কিছু অল্টারনেটিভ ডিসকাস করতে পারি?” এভাবে করে আপনি তার সাথে দ্বিমত পোষণ করলেও তাকে অপমান করলেন না। এরকম করে, সিচুয়েশন এবং অবস্থা বুঝে আমাদেরকে ডিরেক্ট এবং ইনডিরেক্ট কমিউনিকেশনের মধ্যে ব্যালেন্স করতে হবে। তবে চিন্তার কারণ নেই, কিছুদিন চর্চা করলেই আপনি নিজ থেকেই এই দুই ধরনের কমিউনিকেশন ব্যবহার করা শিখে যাবেন।
No comments:
Post a Comment