عام بالفي ادم قبل الجن خلق
- জ্বিনজাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদমের দু'হাজার বছর আগে।(১)
জ্বিনেরা পৃথিবীতে বাস করত মানুষের আগে
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ জ্বিনেরা পৃথিবীতে এবং ফিরিশ্তারা আসমানে থাকত । এরাই ছিল আসমান ও যমীনের অধিবাসী। প্রত্যেক আসমানে আলাদা আলাদা ফিরিশ্তারা থাকত এবং প্রত্যেক আসমানবাসীর নামায, তাস্বীহ্ ও দু’আ ছিল নির্ধারিত। প্রতিটি উপরের আসমানের বাসিন্দারা তাদের নীচের আসমানবাসীদের চেয়ে বেশি দু'আ করত, বেশি নামায ও তাস্বীহ্ পড়ত। মোটকথা আসমানে বাস করত ফিরিশ্টামণ্ডলী ও যমীনের বুকে জ্বিনজাতি। (২)
আদি জ্বিনের আকাঙ্ক্ষা
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলছেনঃ আল্লাহ তা'আলা আবূল জিন্নাত (বা জ্বিনজাতির আদিপিতা) ‘সামূম’কে আগুনের শিখা দিয়ে সৃষ্টি করার পর বলেন- তুমি কিছু কামনা করো। সে বলে- 'আমার কামনা হলো এই যে, আমরা
(সবাইকে) দেখব কিন্তু আমাদের যেন কেউ না-দেখে এবং আমরা যেন পৃথিবীতে অদৃশ্য হতে পারি আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় (তারপর মারা যায়)। অতএব তার এই কামনা পূরণ করা হয়। এজন্য জ্বিনেরা নিজেরাতো
দেখতে পায়, কিন্তু অন্যদের চোখে পড়ে না এবং মারা গেলে যমীনের মধ্যে গায়েব হয়ে যায় আর জ্বিনেদের বুড়োরাও জোয়ান হয়ে মারা যায়। (৩)
ইবলীস পৃথিবীতে বাস করছে কবে থেকে
জুওয়াইবির ও উসমান নিজেদের সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা জ্বিনজাতিকে সৃষ্টি করার পর তাদেরকে পৃথিবীতে বসবাস করার নির্দেশ দিলেন। ওরা (এই পৃথিবীতে) আল্লাহর একান্ত অনুগত হয়ে চলতে লাগল ।
অবশেষে, দীর্ঘকাল কেটে যাবার পর, ওরা আল্লাহ্র অবাধ্যতা শুরু করে দিল এবং খুন-খারাবী করতে লাগল। ওদের এক বাদশাহ্ ছিল, যার নাম ছিল ইউসুফ। তাকেও ওরা মেরে ফেলল। তখন আল্লাহ ওদের উপর দ্বিতীয় আসমানের ফিরিশতাদের এক বাহিনী পাঠালেন। ওই বাহিনীকে বলা হতো 'জ্বিন'। ওদের মধ্যে ইবলীসও ছিল। ইবলীস ছিল ৪০০০ জনের সর্দার। সে আসমান থেকে নেমে এসে যমীনের সমস্ত জ্বিন সন্তানকে খতম করল এবং বাকিদের মেরে কেটে সমুদ্রের দ্বীপগুলোর দিকে তাড়িয়ে দিল। তারপর ইবলীস তার বাহিনী সমেত এই যমীনেই থাকতে লাগল। তাদের পক্ষে আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলা আসান হয়ে গেল এবং তারা পৃথিবীতে বসবাস করাকে পছন্দ করল (8) মুহাম্মদ বিন ইসহাক- হযরত হাবীব রিন আবী সাবিত (৫) প্রমুখের বর্ণনাসূত্রে উল্লেখ করেছেনঃ ইবলীস (শয়তান) তার বাহিনীসহ পৃথিবীতে এসে ঠাঁই নিয়েছিল হযরত আদমের থেকে চল্লিশ বছর আগে। (৬)
ফিরিশ্তারা আদম-সৃষ্টিতে আপত্তি করেছিল কেন
হযরত মাকাতিল (রহঃ) ও হযরত জুওয়াইবির (রহঃ) - হযরত যাহ্হাকের
সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা যখন হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার মনস্থঃ করলেন, তখন ফিরিশ্তাদের বললেন-
(অবশ্যই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চলেছি ।)
ফিরিশ্তারা নিবেদন করল-
الدماء ويسفك فيها يفسد من فيها اتجعل
(আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে, সেখানে অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে?)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ এই ফিরিশ্তারা গায়েবের (বা ভবিষ্যতের) খবর জানত না বরং তারা আদম সন্তানদের কার্যকলাপের কথা অনুমান করেছিল জ্বিন সন্তানদের কার্যকলাপ দেখে। তাই তারা বলেছিল- আপনি কি পৃথিবীতে তাদের সৃষ্টি করতে চান যারা জ্বিনদের মতো অশান্তি (ফাসাদ) ঘটাবে এবং জ্বিনদের মতো খুনোখুনি করবে! কেননা জ্বিনেরা তো তাদের এক নবীকেও খুন করেছিল, যার নাম ছিল ইউসুফ। (৭) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা জ্বিনজাতির প্রতি একজন রসূল পাঠান, যিনি জ্বিন সম্প্রদায়কে নির্দেশ দেন আল্লাহর আনুগত্য
করার, তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করার এবং পরস্পর খুনোখুনী বন্ধ করার। কিন্তু যখন জ্বিনেরা আল্লাহর আনুগত্য ছেড়ে দিল এবং খুনোখুনী আরম্ভ করল তখন ফিরিশতারা বলেছিল - আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে সেখানে ফাসাদ করবে ও রক্ত বওয়াবে।
আমি (আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ)) বলছিঃ উল্লেখিত দু'টি বর্ণনার সনদসূত্র জাল। আবু হুযাইফা মিথ্যুক (কায্যাব) এবং জুওয়াইবার পরিত্যাজ্য (মাত্রক) । আর যাহ্হাক (রহঃ) হযরত ইবনে আব্বাসের থেকে সরাসরি শোনেননি। অবশ্য হাকিম (রহঃ) (৮) তাঁর মুস্তাদ্রকে হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) এই (অন্য একটি) বর্ণনা উল্লেখ করেছেন এবং এটিকে তিনি 'সহীহ' বলে স্বীকৃতিও দিয়েছেন।(৯) অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কোরআনের এই
আয়াতাংশের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেনঃ
(অবশ্যই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চলেছি ।)
‘হযরত আদমের (আঃ) সৃষ্টির দু'হাজার বছর আগে পৃথিবীতে বাস করত জ্বিন সম্প্রদায়। তারা পৃথিবীতে অশান্তি ছড়ায় এবং রক্তপাত ঘটায়। তখন আল্লাহ্ পাক একদল ফিরিশ্তা বাহিনী পাঠান। সেই বাহিনী জ্বিনদের মেরে-ধরে সমুদ্রের দ্বীপগুলোয় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। অতঃপর যখন আল্লাহ্ বলেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে এক প্রতিনিধি বানাব, তখন ফিরিশ্তারা বলতে থাকে, আপনি কি পৃথিবীতে এমন লোকদের সৃষ্টি করবেন যারা অশান্তি ছড়াবে এবং সেখানে রক্তারক্তি করবে।(যেমনটা করেছিল জ্বিনেরা)? তখন আল্লাহ্ বলেন- নিশ্চয়ই আমি জানি যা তোমরা জান না।
জ্বিনজাতি সৃষ্ট হয়েছে কোন্ দিনে
হযরত আবূল আলিয়ার বর্ণনাঃ আল্লাহ তা'আলা ফিরিশ্তাদের সৃষ্টি করেছেন বুধবার, জ্বিনদের সৃষ্টি করেছেন বৃহস্পতিবার এবং হযরত আদমকে সৃষ্টি করেছেন শুক্রবার...। (১০)
কার আগে কে
হযরত ইবনে আব্বাসের (রাঃ) বাচনিকে হযরত ওয়াহাবের বর্ণনাঃ আল্লাহ্ তা'আলা সৃষ্টি করেছেন-
জান্নাতকে- জাহান্নামের আগে
আপন রহমতকে- গযবের আগে
আসমানকে- যমীনের আগে
সূর্য ও চাঁদকে- নক্ষত্রদের আগে
দিনকে- রাতের আগে
পানিভাগকে- স্থলভাগের আগে
সমভূমিকে- পাহাড়-পর্বতের আগে
ফিরিশতাদেরকে- জ্বিনদের আগে
জ্বিনজাতিকে- মানবজাতির আগে
পুরুষ জাতিকে- স্ত্রী জাতির আগে। (১১)
প্রমাণসূত্রঃ
(১) আল-মুবতাদায়ে ইসহাক বিন বশীর। কোনও কোনও আলেমের মতে, হাদীসটির রাবী আবূ হুযাইফা বিন বাশার 'যঈফ' ও 'মাক’: মীযান আল্-ইঅতিদাল, যাহাবী।
(২) এটি যহরত যাহ্হাক (রহঃ)-এর সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন জুওয়াইবার বিন্ সাঈদ আবুল ক্বাসিম বলখী মুফাস্সির, যিনি চরম পর্যায়ের 'যঈফ' রাবীঃ তাকরীবুত তাহযীব; মীযান আল-ইঅতিদাল ।
(৩) অর্থাৎ মানবশিশু শেষ বয়সে বৃদ্ধ হয়ে মারা যায় কিন্তু জ্বিনেরা মারা যায় বৃদ্ধ থেকে ফের জোয়ান হবার পর।
(৪) তাফসীর জুওয়াইবির। তাফসীর উসমান বিন আবী শায়বাহ্।
(৫) তাবিঈ, ফকীহ্, মৃত্যুসন ১১৯ হিজরী।
(৬) তারীখ মুহাম্মদ বিন ইসহাক ।
(৭) তাফসীর মাকাতিল বিন সুলাইমান। তাফসীর জুওয়াইবির। জ্বিনজাতির মধ্যে কেউ নবী হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ এই গ্রন্থের পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে।
(৮) মৃত্যুসন ৩২১ হিজরী।
(৯) মুস্তাদরকে হাকিম, ২:২৬১। ইমাম যাহাবীও এই স্বীকৃতিদানকে সমর্থন করেছেন।
(১০) ইবনে জারীর (তাফসীরে ত্ববারীয়। আবু হাতিম। কিতাবুল আযামাহ, আবূ আশ্-শায়খ ।
(১১) কিতাবুল আযামাহ, আবূ আশ্-শাইখ।
No comments:
Post a Comment