জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস
জ্বিন সম্প্রদায়ের বিষয়ে হাজারো প্রশ্নের উত্তরমালা
জ্বিন জাতির অস্তিত্ব
‘জ্বিন’শব্দের অর্থ ও পরিচিতি
হযরত ইবনে দুরাইদ (রহঃ) (১) বলেছেনঃ 'জ্বিনজাতি মানুষদের থেকে আলাদা এক সৃষ্টি। জ্বিন শব্দের (মোটামুটি)অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুক্কায়িত, আবৃত প্রভৃতি । জ্বিন্নাহ্, জ্বিন ও জ্বান বলতে একই জিনিস বোঝালেও ‘জ্বিন’ হলো জ্বিন্নাত বা জ্বিনজাতির এক বিশেষ প্রজাতি ।
জ্বিন কারা
হযরত আবূ উমার আয্-যাহিদ (২) বলেছেনঃ জিন্নাত বা জ্বিনজাতির কুকুর ও ইতর শ্রেণীকে বলা হয় জ্বিন।
জ্বান কারা
হযরত জাওহারী (৩) বলেছেনঃ ‘জ্বান’হলো জ্বিনজাতির বাপ বা আদিপিতা অর্থাৎ আবূল জ্বিন ।
জ্বিনকে জ্বিন বলা হয় কেন
হযরত ইবনে আকীল হাম্বালী (রহঃ)(৪) বলেছেনঃ লুকিয়ে থাকা ও চোখের আড়ালে থাকার কারণে জ্বিনকে জ্বিন বলা হয়। (৫)
শয়তান কারা
আল্লামা ইবনে আকীল বলেছেনঃ শয়তানরা হলো এক শ্রেণীর জ্বিন যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা (অভিশপ্ত) ইবলীসের বংশধরদের অন্তর্গত ।
মারাদাহ্ কারা
আল্লামা ইবনে আকীলের মতেঃ জ্বিনজাতির মধ্যে যারা অত্যন্ত অবাধ্য ও চূড়ান্ত পর্যায়ের পথভ্রষ্ট তাদেরকে বলা হয় মারাদাহ্।
জ্বিনজাতির শ্রেণীবিভাগ
হাফিয ইবনে আবদুল বার (৬) বলেছেনঃ ভাষাবিশারদদের মতে, জ্বিনদের
কয়েকটি শ্রেণী রয়েছে। যেমন-
১. জ্বিনঃ অর্থাৎ সাধারণ জ্বিন
২. আমির (বহুবচনে উম্মার): মানুষের সাথে থাকে
৩. আওয়াহ্ঃ সামনে আসে
৪. শয়তানঃ উদ্ধত, অবাধ্য
৫. ইফ্রীত্বঃ শয়তানের চাইতেও বিপজ্জনক।
জ্বিনজাতির অস্তিত্বের প্রতি সব মুসলমান একমত
শায়খ তাকীউদ্দীন ইবনে তাইমিয়াহ্ (রহঃ) বলেছেনঃ দলমত নির্বিশেষে মুসলমানদের কেউ-ই জ্বিনজাতির অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি। অধিকাংশ কাফিরও জ্বিনদের অস্তিত্ব স্বীকার করে। কেননা জ্বিনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নবী-রসূলদের উক্তি লাগাতারভাবে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছ পর্যন্ত পৌঁছেছে। যা আম-খাস নির্বিশেষে সকলের পক্ষে জেনে যাওয়া স্বাভাবিক । কেবল অজ্ঞ দার্শনিকদের নগণ্য এক গোষ্ঠী ছাড়া জ্বিনজাতির অস্তিত্বকে কেউ-ই অস্বীকার করে না।
‘কারিয়া’ ফির্কার অভিমত
কাযী আবূ বাকর বাকিলানী (৭) বলেছেনঃ ‘কারিয়া’ ফির্কার পুরানো যুগের অধিকাংশ মুরুব্বী তো জ্বিনজাতির অস্তিত্ব স্বীকার করতেন। কিন্তু বর্তমানের মুরুব্বীরা অস্বীকার করেন। অবশ্য এঁদের মধ্যে কিছু মানুষ এখনও জ্বিনদের
অস্তিত্ব স্বীকার করেন এবং বলেন- জ্বিনদের শরীর সূক্ষ্ম হওয়ার কারণে এবং ওদের মধ্যে রশ্মি প্রবাহের জন্য আমরা দেখতে পাই না। আবার ঐ ফির্কার কতক ব্যক্তির মতে, জ্বিনদের দেখা না যাওয়ার কারণ ওদের কোনও রং বা বর্ণ
না থাকা। যেমন হাওয়ার কোনও রং নেই বলে দেখা যায় না।
প্রমাণসূত্রঃ
(১) মুহাম্মদ বিন হাসান আয্দী, ইমাম-উশ-শু'আরা অল্-লুগাত, মৃত্যুসন ৩২১হিজরী ।
(২) আল্লামা মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহিদ বাগদাদী, মৃত্যুসন ২৪৭ হিজরী।
(৩) ইব্রাহীম বিন সাঈদ আবূ ইসহাক মুহাদ্দিসে আজীম বাগদাদী, মৃত্যুসন ২৪৭ হিজরী।
(৪) মুহাম্মদ বিন আকীল বাগদাদী যাহিরী আবুল ওয়াফা, আলিমুল ইরাক, শায়খুল হানাবিলা।
(৫) কিতাবুল ফুনুন ।
(৬) ইউসুফ বিন আব্দুল্লাহ্ বিন মুহাম্মদ কুরতুবী মা-লিকী আবূ আমর, মুআরিখে আদীব,
মুহাক্কিকে আযীম, মুসান্নিফে কুতুবে কাসীরহ্, হাফীযুল মারিব, মৃত্যুসন ৪৬৩ হিজরী।
(৭) মুহাম্মদ ইবনুত ত্বইয়িব বিন মুহাম্মদ কাযী, মুতাকাল্লিমে ইসলাম, বাগদাদী, সমকালীন
‘আশায়িরাহ্ দলের
নেতা, মৃত্যুসন ৪০৩ হিজরী।
No comments:
Post a Comment