একজন ভালো ছাত্র শুধু মেধাবী হবে না, তার মধ্যে মানুষ হিসেবে অন্যান্য গুণেরও সমাহার ঘটবে। ছাত্রজীবনে কতগুলো গুণ থাকা অতি জরুরি। এসব গুণ পরিলক্ষিত হলেই তাকে সবাই ভালো ছাত্র বলে। এই গুণগুলো একে একে জেনে নাও:
মেধাবী
একজন ভালো ছাত্র প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হবে। কোনো পড়া মুখস্থ করা, দ্রুত শেখা ও লেখা, মনে রাখা- এসব ব্যাপারে সে হবে সবার মধ্যে অন্যতম। পড়তে তার ভালো লাগবে, লেখাপড়ায় আনন্দ পাবে ও পড়াকে সহজ মনে করবে।
পরীক্ষার হলেও তার সকল প্রশ্নোত্তর মনে থাকে ও পরীক্ষার খাতায় সকল প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারে।
এতক্ষণ যা কিছু বলা হল, মেধাবী ছাত্র হলেই তার বাস্তবায়ন সম্ভব।
দায়িত্ববান
একজন ভাল ছাত্র কাজকর্মে দায়িত্বশীল হবে। বিশেষ করে পড়াশোনায় হবে যত্নবান। লেখাপড়ার ব্যাপারে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে সে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে থাকে। পড়াশোনার ব্যাপারে যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি সে ব্যক্তিগত জীবনেও হয় দায়িত্বশীল। শৃঙ্খলাবোধ তাকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
এ ধরনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অলসতা থাকে না। দায়িত্ব-জ্ঞান তাকে কর্মঠ করে তুলে। লেখাপড়ার ব্যাপারে এরা এতই সিরিয়াস থাকে যে, তারা ক্লাসের সেরা ছাত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।
সৎ চরিত্রের অধিকারী
ভাল ছাত্র মানেই চরিত্রবান। সৎ চরিত্রের অধিকারী হওয়ায় সে হয় সত্যবাদী। এ ধরনের ছাত্ররা সচরাচর আদর্শবাদী হয়ে থাকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়।
পরিশ্রমী
'পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি'- এ কথাটি ভাল ছাত্র মাত্রই প্রযোজ্য। এরা লেখাপড়ায় কঠোর পরিশ্রমী হয়। এর ফসল হিসেবেই তারা পরীক্ষায় ভাল করে। তারা কখনো ফাঁকি দেয় না। তারা পরিশ্রম করে আনন্দ পায়। তারা যেমন পরিশ্রম করে তেমন ফলও পেয়ে থাকে। এ বৈশিষ্ট্যটি শিক্ষার্থীকে বাস্তব জীবনের সাথে পরিচয় করতে শেখায়।
সময়ের সদ্ব্যবহারকারী
একজন ভাল ছাত্র সময়ের অপচয় করে না। নির্ধারিত সময়সীমার প্রতিটি মুহূর্ত সে লেখাপড়ায় ব্যয় করে। যেহেতু অন্য কাজে সময় দেয় কম, এজন্য তারা পড়াশোনার জন্য প্রচুর সময় পায়। তারা যখনকার পড়া তখনই শেখে।
রুটিনমাফিক তারা সময়কে ভাগ করে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে; সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পড়াশোনা করে থাকে। এজন্যই তাদের রেজাল্টও ভাল হয়।
আত্মবিশ্বাসী
ভাল ছাত্রদের আত্মবিশ্বাস বেশি থাকে। ছাত্র-জীবনে সফলতার ব্যাপারে এদের বিশ্বাস থাকে প্রবল। আমি পারব- এ ধরনের মনোবৃত্তি তাদের লেখাপড়ার গতি বাড়িয়ে দেয়। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী হওয়ায় ভাল ছাত্ররা পরীক্ষায়ও ভাল করে। এরা লেখাপড়ার ব্যাপারে হতাশ হয় না। নিয়মিত অধ্যবসায়ের ফলে তাদের পড়াশোনায় বিশ্বাস দিন দিন বাড়তেই থাকে। ভাল ছাত্র মাত্রই এ ধরনের গুণাবলির অধিকারী হয়। এরা সাহসীও হয়।
অমায়িক ব্যবহার
ভাল ছাত্ররা মিশুক প্রকৃতির হয়। নম্র-ভদ্র ব্যবহার এদের অন্যতম গুণ। এ গুণের কারণে এরা অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে; অপরের মন জয় করতে পারে সহজেই। সুন্দর ব্যবহারের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাদের ভালবাসেন। শিক্ষকরা তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আনন্দ পান। এই গুণটির কারণে তারা লেখাপড়ায় ভাল করে।
মনোযোগী
ভাল ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়ায় যথেষ্ট মনোযোগীও। একাগ্রতার দরুন এরা পড়াশোনার জন্য অধিক সময় দিতে পারে। মনোযোগী হওয়ার ফলে এদের মুখস্থ করার ক্ষমতা ও লেখনীশক্তি থাকে তীব্র। ভাল ছাত্র হবার এই কৌশলটি তাদের প্রকৃত মেধাবী হতে সহায়তা করে। এই মনোযোগ লেখাপড়ার বাইরেও সুন্দরভাবে চলতে সাহায্য করে থাকে।
শ্রেণী-কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
ভাল ছাত্র মানেই সে শ্রেণী-কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। বাড়ির কাজ করা, ক্লাসে পড়া বলা, টিচারকে প্রশ্ন করা, প্রতিটি কাজই তারা করবে, অর্থাৎ ক্লাসে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। এ ধরনের ছাত্ররা শ্রেণীকক্ষের প্রাণ। এরা শ্রেণীকক্ষকে মাতিয়ে রাখে। এরা নিয়মিত ক্লাসে ও ক্লাস পরীক্ষায় উপস্থিত থাকে। এটি ভাল শিক্ষার্থীর একটি অন্যতম গুণ।
পড়ুয়া
ভাল ছাত্ররা সচরাচর পড়ুয়া হয়; পরীক্ষার অনেক আগেই সিলেবাস শেষ করতে পারে। এদের লেখাপড়ার ক্ষমতা বেশি থাকে। এদের এবং যে-কোনো পড়া প্রতিকূল পরিবেশেও পড়তে, বুঝতে ও মুখস্থ করতে পারে। সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে এই গুণটির বড়ই অভাব।
সুস্বাস্থ্যের অধিকারী
রোগা ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারে না। লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজন নীরোগ দেহ। দেহ নীরোগ হলেই পড়াশোনার জন্য অধিক পরিশ্রম করা যায়। ছাত্রজীবনে অসুস্থ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু অসুস্থ হলে সাথে সাথে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া অতি জরুরি। তাই স্বাস্থ্য-সচেতনতাও ভাল ছাত্রের একটি গুণ।
জীবনের লক্ষ্য স্থির থাকা
মেধাবী ছাত্ররা ছোটবেলা থেকেই তাদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করে রাখে। লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তারা পড়াশোনায় প্রচুর শ্রম দেয়। যখনই লেখাপড়ায় মন বসে না, তখনই তারা জীবনের লক্ষ্যের কথা ভাবে। আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছতেই হবে- এই ভাবনা থেকে তারা পড়াশোনায় উৎসাহ পেয়ে থাকে। তাই ভাল ছাত্রদের জীবনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে।
পাঠ্য বহির্ভূত বই পড়া
ভাল ছাত্ররা পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই, যেমন- সাধারণ জ্ঞান, উপদেশমূলক ও জীবনীগ্রন্থ পড়ে থাকে। এসব গ্রন্থ অধ্যয়নের মাধ্যমে তারা বাস্তব জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে থাকে। এ-সমস্ত বই বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে থাকে।
No comments:
Post a Comment