ড্রাগন ফ্রুট বা ড্রাগন ফল একধরনের ক্যাকটাস গাছের ফল। এ ফলের অন্য নাম পিটাইয়া। চীনে এই ফলের নাম হুয়ো লং গুয়ো, ভিয়েতনামে থানহ লং। ড্রাগন ফলের জন্ম মধ্য আমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালয়েশিয়ায় ফলটি প্রবর্তিত হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে ভিয়েতনামে ফলটি বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও চাষ হচ্ছে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারে প্রফেসর ড. এম এ রহিম গবেষণার উদ্দেশ্যে ড্রাগন ফলের কয়েকটি জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড থেকে। সেসব গাছ দিব্যি ফল দিচ্ছে। এই সফলতার ওপর ভিত্তি করে সেন্টার থেকে এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
♦গাছের বর্ণনা : ড্রাগন ফলের গাছ এক রকমের ক্যাকটাস। গাছ লতানো। গাছে কোনো পাতা নেই। গাছ ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হয়। সবুজ রঙের এই গাছে খুব সুন্দর সাদা ও সবুজাভ সাদা রঙের ফুল ফোটে। ফুল দেখতে অনেকটা ‘নাইট কুইন’-এর মতো। ফুল সুগìধযুক্ত ও স্বপরাগায়িত। ফুল বেশ বড়। ড্রাগন ফুলকে বলা হয় ‘মুন ফ্লাওয়ার’ বা ‘কুইন অব দ্য নাইট’। ফুল থেকে ডিম্বাকার ফল গঠিত হয়। ফলের খোসা নরম। একটি ফলের ওজন ১৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম। কখনো কখনো ফলের ওজন এক কেজি পর্যন্ত হয়। পাকা ফলের শাঁস বেশ নরম, কালোজিরার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো রঙের অসংখ্য বীজযুক্ত, হালকা মিষ্টি, ক্যালরি খুব কম।
♦পুষ্টিমূল্য : ড্রাগন ফলের ১০০ গ্রামের মধ্যে ৫৫ গ্রাম থাকে ভক্ষণযোগ্য। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে থাকে পানি ৮০ থেকে ৯০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৯ থেকে ১৪ গ্রাম, প্রোটিন ০.১৫ থেকে ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ থেকে ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৩ থেকে ০.৯ গ্রাম, অ্যাশ ০.৪ থেকে ০.৭ গ্রাম ও ক্যালরি ৩৫ থেকে ৫০। এ ছাড়া খনিজ ও ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ক্যালসিয়াম ৬-১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৬-৩৬ মিলিগ্রাম, নায়াসিন ০.২-০.৪৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪-২৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ও রিবোফ্লাভিন থাকে খুব অল্প। লাল শাঁসের ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি থাকে বেশি। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভাতের পরিবর্তে এ ফল উত্তম। তাইওয়ানের ডাক্তাররা ডায়াবেটিক রোগীদের ভাতের বদলে এ ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমনকি এ ফল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ফলের শাঁস পিচ্ছিল হওয়ায় তা কেষ্ঠ্যকাঠিন্যও দূর করে।
♦ফলের ব্যবহার : ফিন্সজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেলে বেশি ভালো লাগে। ফল থেকে রস তৈরি করা যায়। এর ফুলও খাওয়া হয়। খাওয়ার জন্য ফলকে চাকু দিয়ে লম্বালম্বিভাবে দুই ফালি করে ফেলা হয়। তারপর চামচ দিয়ে কুরে কুরে নরম শাঁস তুলে খাওয়া যায়। এ ছাড়া খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া যায়। বীজসহ শাঁস খাওয়া হয়। বীজ চিবিয়ে না খেলে তা কখনো হজম হয় না। এমনকি পরিমাণে বেশি খেলে এ ফল সহজে হজম হয় না। বিশেষ করে লাল শাঁসবিশিষ্ট ড্রাগন ফলগুলো খাওয়ার পর প্রস্রাবের রঙও লাল হয়ে যায়।
♦জাত : ড্রাগন ফল আছে দুই রকমের টক স্বাদের ও মিষ্টি স্বাদের। মিষ্টি স্বাদের ফলবিশিষ্ট ড্রাগন ফলের আবার তিনটি প্রজাতি রয়েছে : লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া। এ প্রজাতির গাছের ফলের খোসার রঙ লাল, শাঁস সাদা। এ প্রজাতির ফলই বেশি দেখা যায়। কোস্টারিকা ড্রাগন ফল। এ ফলের খোসা ও শাঁসের রঙ লাল। হলুদ ড্রাগন ফল। এ ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।
Stenocereus ড্রাগন ফল স্বাদে টক, এগুলো টক ড্রাগন ফল বা ‘সাওয়ার পিটাইয়া’ নামে পরিচিত। আমেরিকার ঊষর অঞ্চলে এগুলো পাওয়া যায়। খুব টক বলে মেক্সিকো ও আমেরিকার লোকরা ওই ড্রাগন ফলের রসকে বিভিন্ন শরবত তৈরিতে কাজে লাগায়, কাঁচা বা তাজা ফল খায় না।
No comments:
Post a Comment