বৃক্ষ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষকে এভাবে সঙ্গায়িত করা হয়: কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ যার মাটি থেকে সুস্পষ্ট শীর্ষ প্রকটতা বিশিষ্ট একটি একক প্রধান কান্ড অথবা গুঁড়ি থেকে বহুধাবিভক্ত অপ্রধান শাখা বিকশিত হয়। কিছু লেখকের মতে পূর্ণ বিকশিত অবস্থায় বৃক্ষের ন্যূনতম উচ্চতা ৩ মিটার থেকে ৬ মিটার হওয়া উচিত।আবার কিছু লেখক গাছের কান্ডের ন্যূনতম ব্যাস নির্ধারণ করেছেন ১০ সেমি। অন্যান্য কাষ্ঠবহুল বৃক্ষ, যারা এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না, যেমন শাখান্বিত প্রধান কাণ্ড অথবা ছোট আকৃতির গাছকে গুল্মবলা হয়। অন্যান্য উদ্ভিদের তুলনায় বৃক্ষ দীর্ঘজীবী হয, কোন কোন গাছ হাজার বছরও বেঁচে থাকে এবং ১১৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।
বৃক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং এদের পত্রপল্লবের নিচে আবহাওয়া-সুরক্ষিত বাস্তুসংস্থান তৈরি করে। বৃক্ষ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ল্যান্ডস্কেপিং ও কৃষিরউপাদানো বটে, যার কারণ হল তাদের সৌন্দর্যগত আবেদন ও বিভিন্ন ধরণের ফল। বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ঘরবাড়ি তৈরি সহ নানান কাঠামো তৈরিতে এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৪,০০০ কোটি গাছ ছিল, প্রতি মানুষে প্রায় ৬১ টি।
শ্রেণীবিন্যাসঃ
বৃক্ষ উদ্ভিদের অনেক বর্গ ও গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। বৃক্ষ বিভিন্ন রকম গড়ন প্রকার, পাতার রকমফের এবং আকৃতি, বাকলের বৈশিষ্ট এবং প্রজনন অঙ্গের বৈচিত্র প্রদর্শন করে।
উদ্ভিদের বৃক্ষরূপটি পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়ায় উদ্ভব হয়েছে, যা একে সমান্তরাল বিবর্তনের একটি চিরায়ত উদাহরণে পরিণত করেছে। পৃথিবীতে প্রায় ১,০০,০০০ প্রজাতির বৃক্ষ আছে, যা মোট উদ্ভিদ প্রজাতির ২৫%। অধিকাংশ বৃক্ষ প্রজাতি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মে যার অধিকাংশই এখনো উদ্ভিদবিদরা পর্যবেক্ষন করতে পারেননি, যার ফলে প্রজাতি বৈশিষ্ট ও সীমা সম্বন্ধে এখনো আমরা খুব অল্পই জানতে পেরেছি।
প্রাচীনতম বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে ট্রি ফার্ণ, হর্সটেইল এবং লাইকোফাইট, যারা কার্বোনিফেরাস যুগে উদ্ভূত হয়েছিল; ট্রি ফার্ণএখনো তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, কিন্তু এখনকার হর্সটেইল এবং লাইকোফাইটরা আর বৃক্ষ রূপে নেই।পরবর্তীতে ট্রায়াসিক যুগে কনিফেরাস, জিংকগো, সাইকাড এবং অন্যান্য নগ্নবীজীর আবির্ভাব ঘটে এবং এরই ধারাবাহিকতায় ক্রেটাসাস যুগে জন্ম নেয় পুষ্পক উদ্ভিদ। বর্তমানে বেশিরভাগ বৃক্ষ প্রজাতিই সপুষ্পক (আবৃতবীজী) এবং কনিফার।
অঙ্গসংস্থানঃ
বৃক্ষমূল গাছের দেহকে মাটির ওপর ধরে রাখে। ভূমিক্ষয় এই তরুণ পাইন গাছটির মূলের চারপাশের মাটি সরে গেছে।
বৃক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ হল মূল, কাণ্ড, ডালপালা, বাকল, ফুল, ফল এবং পাতা। বৃক্ষকান্ড মূলত সাহায্যকারী ও পরিবহন কলা জাইলেম ও ফ্লোয়েম দ্বারা গঠিত। কাষ্ঠজাইলেম কোষে তৈরি, বাকল তৈরি ফ্লোয়েম ও অন্যান্য অন্যান্য বহিঃস্থ ভাস্কুলার ক্যাম্বিয়াম টিস্যুতে। কাণ্ডের ব্যাস বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বৃক্ষকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়: এক্সোজেনাস ও এন্ডোজেনাস। বেশিরভাগ বৃক্ষই (সব কনিফার এবং প্রায় সব বৃহৎপত্রী বৃক্ষ) এক্সোজেনাস, এদের কান্ডের বাইরের দিকে নতুন নতুন কাষ্ঠের সৃষ্টি হবার মাধ্যমে এদের বৃদ্ধি ঘটে। এন্ডোজেনাস বৃক্ষে (যেমন পাম এবং ড্রাগন গাছ ইত্যাদি) ভেতরের দিকে নতুন অংশাদি তৈরির কারণে বৃদ্ধি ঘটে।
No comments:
Post a Comment