ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য ও কল্যাণে আকৃষ্ট হয়ে বিশ্বের দেশে দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের যে জোয়ার ওঠে সেই ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপের মাটিতেও ৷ অষ্টম শতাব্দীতে স্পেনে কায়েম হয় মুসলিম শাসন ৷ মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় স্পেন জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে ৷ দীর্ঘ ৮০০ বছর একটানা অব্যাহত থাকে এ উন্নতির ধারা ৷
স্পেনে মুসলমানদের ৮০০ বছরের গৌরবময় শাসনের ফলে দেশটিতে তখন অর্থসম্পদ, বিত্ত-বৈভবের অঢেল জোয়ার ৷ মুসলমানরা ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে ভুলে যায় কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা ৷ নৈতিক অবক্ষয় ও অনৈক্য ধীরে ধীরে গ্রাস করে তাদের ৷ এ দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে খ্রিষ্টান জগত্ ৷ তারা মেতে উঠে কুটিল ষড়যন্ত্রে ৷ সিদ্ধান্ত নেয়, 'স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করতে হবে ৷' এ চিন্তা নিয়েই পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম-বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান সম্রাট ফার্দিনান্দকে বিয়ে করে ৷ বিয়ের পর দু'জন মিলে নেতৃত্ব দেয় মুসলিম নিধনের ৷ খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত বাহিনী হাজার হাজার নারী-পুরুষকে হত্যা করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে উল্লাস করতে করতে ছুটে আসে রাজধানী গ্রানাডায় ৷
এতদিনে টনক নড়ে মুসলিম বাহিনীর ৷ কখনো সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজিত করতে পারেনি বলে চতুর ফার্দিনান্দ পা বাড়ায় ভিন্ন পথে ৷ তার নির্দেশে আশপাশের সব শস্যখামার জ্বালিয়ে দেয়া হয় ৷ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র ভেগা উপত্যকা ৷ অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে শহরে ৷ দুর্ভিক্ষ যখন প্রকট আকার ধারণ করলো তখন প্রতারক ফার্দিনান্দ ঘোষণা করলো, মুসলমানরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেয় তবে তাদের বিনা রক্তপাতে মুক্তি দেয়া হবে ৷
সেদিন ছিল ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল ৷ দুর্ভাগ্য তাড়িত গ্রানাডাবাসী অসহায় নারী ও মাসুম বাচ্চাদের করুণ মুখের দিয়ে তাকিয়ে খ্রিষ্টানদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে খুলে দেয় শহরের প্রধান ফটক ৷ সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেয় আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদে ৷ শহরে প্রবেশ করে খ্রিষ্টান বাহিনী মুসলমানদেরকে মসজিদের ভেতর আটকে রেখে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয় ৷ এরপর একযোগে শহরের সমস্ত মসজিদে আগুন লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে মেতে ওঠে হায়েনারা ৷ লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ-শিশু অসহায় আর্তনাদ করতে করতে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায় মসজিদের ভেতর ৷ প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধ অসহায় মুসলমানদের আর্তচিত্কার যখন গ্রানাডার আকাশ-বাতাস ভারী ও শোকাতুর করে তুলল তখন রাণী ইসাবেলা হেসে বলতে লাগলো, 'হায় এপ্রিলের বোকা! শত্রুর আশ্বাস কেউ বিশ্বাস করে?' সেই থেকে খ্রিষ্টান জগত্ প্রতি বছর ১লা এপ্রিল আড়ম্বরের সাথে পালন করে আসছে-
April Fool মানে 'এপ্রিলের বোকা' উৎসব ৷
অত্যাচারী রাজা রডরিকের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ জনগণকে মুক্তি দেয়ার জন্য বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিহাদ স্পেনে যে ইসলামী শাসনের সূত্রপাত করেছিলেন তার সফল ভোগ করেছিল স্পেনবাসী দীর্ঘ ৮০০ বছর ৷ স্পেনের ইতিহাসে এ স্বর্ণালী সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে গ্রানাদা, আল হামরা, কর্দোভা, সেভিজা, তলেদো ৷ কিন্তু আফসোস! বিলাস বসনে মত্ত হয়ে মুসলমানরা ইসলাম থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে তাদের জীবনে সীমাহীন দুঃখই কেবল নেমে আসেনি, তাদের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে স্পেনের মাটি থেকে ৷ ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল গ্রানাডা ট্র্যাজেডির ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্পেনে আড়ম্বরপূর্ণ এক সভায় মিলিত হয়েছিল বিশ্ব খ্রিষ্ট সম্প্রদায় ৷ সেখানে তারা নতুন করে শপথ গ্রহণ করে একচ্ছত্র খ্রিষ্টীয় বিশ্ব প্রতিষ্ঠার। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাগরণ প্রতিহত করার জন্য গড়ে তোলে 'হলি মেরি ফান্ড' ৷ আর এরই ধারাবাহিকতায় গোটা খ্রিষ্টান বিশ্ব নানা অজুহাতে একের পর এক মুসলিম দেশগুলোতে আগ্রাসন চালাচ্ছে ৷ অতএব সামনে ভয়াবহ দুর্দিন ৷ এই দুর্দিনে এসব নব্য ইসাবেলাদের বিরুদ্ধে শান্তিকামী শক্তির চাই সুদৃঢ় ঐক্য ৷ আর যদি তা করতে ব্যর্থ হই তবে অচিরেই গ্রানাডার মতো বধ্যভূমিতে পরিণত হবে গোটা মুসলিম বিশ্ব।
এজন্য এপ্রিল ফুলের আনন্দ না করে বুঝুন আসলে এটা আমাদের মুসলিমদের জন্য কত বড় লজ্জা ও ক্ষতি ??
No comments:
Post a Comment