ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেডের ইতিহাস: - EDUCATION

Breaking

Around the World

Sunday, May 18, 2025

ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেডের ইতিহাস:

Google Maps

প্রতিষ্ঠা প্রাথমিক পর্যায়: ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান আমলে, খুলনার ফুলতলা উপজেলার আটরা শিল্পাঞ্চলে এটি তৎকালীন সময়ে বেসরকারি মালিকানায় গড়ে তোলা হয় স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পনীতি অনুসরণ করে এটিকে জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (BJMC)-এর আওতায় নিয়ে আসে

অবস্থান পরিকাঠামো: মিলটি প্রায় ৪০ একরের বেশি জমির উপর অবস্থিত এবং এতে রয়েছে আধুনিক তাঁত মেশিন, গুদাম, অফিস ভবন, ওয়ার্কার্স কোয়ার্টার, নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কাঁচা পাট সংরক্ষণের জন্য গোডাউন ইত্যাদি মিলটিতে ২৭৫টির মতো তাঁত মেশিন রয়েছে যা হেসিয়ান, স্যাকিং এবং কার্পেট ব্যাকিং ক্লথ (CBC) উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়

পণ্য উৎপাদন: প্রধান উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে:

হেসিয়ান (জুট কাপড়)

স্যাকিং (বস্তা)

কার্পেট ব্যাকিং ক্লথ (CBC)

এসব পণ্য দেশীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করা হতো, বিশেষ করে ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে


অর্থনৈতিক অবস্থা চ্যালেঞ্জ: ১৯৭০-৮০ দশকে মিলটি তুলনামূলক লাভজনকভাবে চললেও পরবর্তীতে সরকারী অব্যবস্থাপনা, আধুনিকায়নের অভাব, দুর্নীতি, বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং উৎপাদন ব্যয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় মিলটি লোকসানে পড়ে কারণে একাধিকবার এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়

পুনরায় চালু ভবিষ্যত পরিকল্পনা: ২০০২-২০০৩ সালে মিলটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়, তবে শ্রমিকদের আন্দোলন সরকারের হস্তক্ষেপে তা পুনরায় চালু করা হয় এরপর থেকে মাঝে মাঝে মিলটি চালু বন্ধ থাকার মধ্যে ছিল ২০২০ সালে দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের মতো এটি আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয় তবে সরকারপিপিপি’ (Public-Private Partnership) মডেলে এই মিলগুলো আধুনিকায়ন করে পুনরায় চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে

ফুটবল মাঠ সামাজিক প্রেক্ষাপট: মিলের আওতায় একটি বড় ফুটবল মাঠ রয়েছে যা স্থানীয় খেলাধুলা এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হয় এটি এলাকাবাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন মিলনস্থল হিসেবে বিবেচিত


প্রশাসনিক কাঠামো কর্মসংস্থান: ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড এক সময়ে ফুলতলা উপজেলায় সবচেয়ে বড় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ছিল এখানে এক সময়ে প্রায় ,০০০-এর বেশি শ্রমিক কর্মচারী সরাসরি কাজ করতেন এছাড়া পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষ এই মিলের সঙ্গে জড়িত ছিলেনযেমন: পাট চাষি, পরিবহন শ্রমিক, স্থানীয় দোকানদার, মিস্ত্রি ইত্যাদি

মিলটিতে প্রধান নির্বাহীর অধীনে বিভিন্ন বিভাগ পরিচালিত হতো, যেমন:

উৎপাদন বিভাগ

যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ

প্রশাসন মানবসম্পদ

হিসাব অর্থ

নিরাপত্তা বিভাগ

গুদাম বিভাগ

সামাজিক অবদান: ইস্টার্ন জুট মিলস শুধুমাত্র একটি কারখানা নয়, এটি একটি সামাজিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছিল মিল চত্বরে ছিল:

শ্রমিকদের আবাসন কোয়ার্টার

স্কুল ক্লিনিক

একটি বিশাল ফুটবল মাঠ ক্রীড়া সংগঠন

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মিলনায়তন

এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ "ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ" হিসেবে বিবেচিত ছিল, যেখানে শ্রমিকদের পরিবারের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজনীয় সবকিছুই ছিল

 

শ্রমিক আন্দোলন ইতিহাস: ইস্টার্ন জুট মিলস বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সময়ে বেতন বোনাস, চাকরি স্থায়ীকরণ, বন্ধ মিল চালুর দাবিতে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেছেন বিশেষ করে ২০০২-২০০৩ সালে এবং ২০১৯-২০২০ সালে শ্রমিকদের ধর্মঘট, মানববন্ধন অবস্থান কর্মসূচি গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছিল

অর্থনৈতিক প্রভাব: এক সময়ে মিলটি সরকারকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিত বাংলাদেশের পাটখাতের প্রধান রপ্তানিকারক হিসেবে ইস্টার্ন জুট মিলসের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পলিথিন সিন্থেটিক ফাইবারের প্রসার পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেয়, ফলে রপ্তানির পরিমাণও হ্রাস পায়


বর্তমান অবস্থা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার বিজেএমসির অধীনে থাকা সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে তবে ২০২১ সালের পর থেকে সরকার ঘোষণা দেয় যে এসব মিলকে পিপিপি (Public-Private Partnership) মডেলে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করা হবে ইস্টার্ন জুট মিলসও এই উদ্যোগের অংশ

বর্তমানে মিলটি বন্ধ থাকলেও ভবিষ্যতে এটি পুনরায় চালুর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে মিল এলাকায় নতুন করে সংস্কার, যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে


বর্তমানে (মে ২০২৫) খুলনার ফুলতলা উপজেলার আটরা শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড বন্ধ রয়েছে ২০২০ সালের জুলাই বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনস্থ ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে, যার মধ্যে ইস্টার্ন জুট মিলসও অন্তর্ভুক্ত ছিল  এই সিদ্ধান্তের ফলে খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে প্রায় ৩৩,০০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েন 

২০২১ সালে সরকার এই বন্ধ পাটকলগুলোকে বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যার আওতায় থেকে ৩০ বছরের জন্য লিজ চুক্তি প্রস্তাব করা হয় ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত, খুলনার ৯টি বন্ধ পাটকলের মধ্যে ৪টি ইতিমধ্যে লিজ দেওয়া হয়েছে, এবং বাকি ৬টির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে 

তবে, ইস্টার্ন জুট মিলসের কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট অগ্রগতি বা সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি  স্থানীয় শ্রমিক নাগরিকরা মিলটি পুনরায় চালুর দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে আসছেন 

সারাংশ:

ইস্টার্ন জুট মিলস ২০২০ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে সরকার মিলটি বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এখনো মিলটি পুনরায় চালুর কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি


No comments:

Post a Comment