অন্যকে বুঝতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পরিবারের কাউকে, বা বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কাউকে অথবা আপনার সহকর্মীকে আপনি যদি বুঝতে না পারেন তাহলে কোনো সমস্যাই সমাধান হবেনা। বরং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হবে। আপনি যদি কাউকে বুঝতে না পারেন, তাহলে তার দুর্বলতা কোথায়, তার সবলতা কোথায় সেটা ধরতে পারবেন না। নিজের অবস্থান থেকে যদি আরেকজনকে বোঝার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার জন্যও সবকিছু যেমন সহজ হবে, তার জন্যও সহজ হবে।
একটা দোকানের মালিক একদিন দোকানের বাইরে একটা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিল। সাইনবোর্ডে লেখা – কুকুরের বাচ্চা বিক্রি হবে।
এই ধরনের সাইনবোর্ড বা বিজ্ঞাপন সাধারণত বাচ্চাদেরকে খুব আকর্ষণ করে। স্বাভাবিকভাবেই একটা বাচ্চা ছেলে বিজ্ঞাপনটা লক্ষ্য করল। সে দোকানদারের কাছে এসে বলল, আপনি যে কুকুরের বাচ্চাগুলি বিক্রি করবেন সেগুলির দাম কত করে?
দোকানদার উত্তর দিল, ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
ছেলেটা তখন পকেট হাতড়ে কিছু খুচরা টাকা বের করে বলল আমার কাছে ৪৭ টাকা আছে। আমি কি ওই বাচ্চাগুলিকে একবার দেখতে পারি?
দোকানদার তখন হাসল, ভিতরের দিকে তাকিয়ে শিস দিল। তখন দোকানের পিছন থেকে পাশের করিডোর দিয়ে দোকানদারের স্ত্রী বেরিয়ে আসল, আর তার পিছন পিছন পাঁচটা ছোট্ট গোলগাল ও তুলতুলে, পশমের বলের মত কুকুরের বাচ্চা বের হয়ে আসল।
সেই পাঁচটা বাচ্চার মধ্যে একটা বাচ্চা পিছনে পড়েছিল। বাচ্চাটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিল। ছেলেটা সেটা দেখে দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করল, ওই ছোট বাচ্চাটার কী সমস্যা?
দোকানদার তখন তাকে জানাল যে পশু চিকিৎসকের কাছে বাচ্চাটাকে সে নিয়ে গিয়েছিল। সেই পশু চিকিৎসক বাচ্চাটাকে দেখে বলেছেন এই বাচ্চাটার পিছনের একটা পায়ের উপরের অংশের হাড় নেই। ফলে বাচ্চাটা সারাজীবনই এরকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটবে।
ছেলেটা তখন উত্তেজিত হয়ে উঠল। বলল, আমি ওই বাচ্চাটাকেই কিনতে চাই।
দোকানদার তখন বলল, না, এটা তোমার কেনার দরকার নাই। তুমি যদি আসলেই এটাকে নিতে চাও, আমি এমনিই তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।
ছেলেটা এতে মন খারাপ করল। সে দোকানদারের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি চাই না আপনি আমাকে ওকে এমনি এমনি দিয়ে দেন। অন্য বাচ্চাগুলির মত সমান দাম এই বাচ্চাটিরও প্রাপ্য এবং ওর জন্য আমি আপনাকে পুরো দামই দিব। আসলে, আমি এখন আপনাকে ৪৭ টাকা দিব, এবং ওর দাম শোধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে ১২ টাকা করে দিব।
দোকানদার তখন পালটা কথা বলল। সে বলল, তোমার আসলেই এই বাচ্চাটা কেনার দরকার নাই। এই বাচ্চাটা কখনো দৌড়াতে পারবে না, লাফাতে পারবে না এবং অন্য কুকুরের বাচ্চাদের মত তোমার সাথে খেলতেও পারবে না
এই কথা শুনে ছেলেটা ঝুকে মাথা নিচু করল, এরপর নিজের বাম পায়ের প্যান্ট গুটিয়ে দেখাল যে তার পায়ের জায়গায় একটা লোহার নকল পা লাগানো। তারপর দোকানদারের মুখের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বলল,
আমিও খুব একটা ভালো দৌড়াতে পারি না, সুতরাং এই বাচ্চাটার এমন কাউকে দরকার যে তাকে খুব ভাল বুঝতে পারবে।
কেউ যদি তার নিজের সমস্যাকে অনুধাবন করে তাহলে সে অন্যের সমস্যাও সহানুভূতি নিয়ে দেখবে, অন্যকে বুঝতে পারবে। নিজের সমস্যাকে এড়িয়ে গেলে বা তার অস্তিত্ব নেই এমন ভাব করলে, সে অন্যের অসুবিধা বা সমস্যাকে স্বাভাবিক জিনিস হিসাবে দেখবে না।
পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মস্থলে আরেকজন মানুষের সাথে ইন্টার্যাকশনের ক্ষেত্রে তাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাহলেই অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে, অনেক সমস্যার অস্তিত্ব থাকবে না। কিছু সমস্যা তৈরিও হবে না।
No comments:
Post a Comment