বাংলা চারটি অক্ষরে একটি শব্দ ‘ভালবাসা’।
ভালবাসার আভিধানিক অর্থ- হৃদয়ের টান, অনুরক্ত হওয়া। আর ঘনীভূত ভালবাসাকেই ‘প্রেম’ বলে।
ভলবাসা কথাটা শুনলেই কেমন মায়া মায়া ভাব জন্ম নেয় ‘হৃদয়’ নামক স্থানটিতে। স্বামী-স্ত্রী
পরস্পরের পরিপূরক বলেই পাগলের মত একে অপরকে ভালবাসে, ধ্যান করে, স্বপ্ন দেখে, পরস্পরের
সঙ্গকাতর হয়, সূর্য্ ও সূর্য্মুখী ফুলের মত একে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে দিন কাটায়। কিন্তু
যখন এ প্রেম-ভালবাসা কোন বেগানা নারী-পুরুষের মধ্যে সংঘটিত হয় তখন সেটা ধর্মীয় দৃষ্টিতে
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। প্রেম-ভালবাসা নামে বেগানা পুরুষের অবাধ মেলামেশা, যৌনাচার ইসলামী
আকীদা বিরোধী। আসলে আমাদের সমাজে মৌলিক পর্দার বিধানের বাস্তবায়ন নেই বলে ছেলে-মেয়েদের
পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাৎ, উঠা-বসা ও কথাবার্তার দ্বারা অভিশপ্ত ইবলিস শয়তান অনায়াসেই
সমাজে নানা অঘটনের জন্ম দিচ্ছে। এ শয়তানী অঘটনের প্রথম ধাপ ও সূত্রই হচ্ছে ভাল লাগা
ও ভালবাসা। আমাদের সমাজে ‘প্রেম-ভালবাসা’ নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বহমান রয়েছে,
তা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ ও হারাম। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, কোন যুবতী কোন অবস্থাতেই কোন
বেগানা যুবকের সান্নিধ্যে যেতে পারবে না।
হাসীসের ভাষ্য মতে, এরুপ দু’জন যুবক-যুবতীর
মাঝে তৃতীয় জন স্বয়ং ইবলিস উপস্থিত থেকে তাদেরকে নানাভাবে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং
সর্বশেষে নির্লজ্জ কাজের উদ্ভব ঘটায়। এরুপ যুবক-যুবতী যেমন নিজেরা কঠিন গুনাহগার হবে,
তেমনি তাদের এ সুযোগ দেয়ার কারণে তাদের পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণও গুনাহগার হবে। হাদীসে বেপর্দায় চলাচলকারী নারীর অভিভাবকদেরকে
‘দাইয়ুস’ বলা হয়েছে। আর ‘দাইয়ুস’ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে হাদীসে রয়েছে।
প্রেম-ভালবাসাকে শয়তানী অ ঘটনের সূত্র কেন
বলা হয়? কারণ হচ্ছে এ প্রেম-ভালবাসার পথ ধরেই একজোড়া বেগানা নারী-পুরুষ যখন ভাব গড়ে
তখন মানসিক জেনার গুনাহ হয়। এরপর যখন পরস্পর দেখ-সাক্ষাৎ করে এবং কথাবার্তা বলে তখন
চোখ ও মুখের জেনার গুনাহ হয়। অতপর যখন চিঠিপত্র আদান-প্রদান করে, তাতে দেখা, লেখা ও
ভাব বিনিময়ের জেনার গুনাহ হয়। তারপর যখন একজন অপর জনকেূ নিয়ে কল্পনা করে, তাতে অন্তরের
জেনার গুনাহ হয়। এছাড়াও যখন তার ভালবাসার টানে একজন অপর জনের নিকট গমন করে তখন পায়ের
জেনার গুনাহ হয়। আর যদি কখনও হাত দিয়ে কোন রকম স্পর্শ হয়, তাতে হাতের জেনার গুনাহ হয়।
তাতে বুঝা যাচ্ছে ভালবাসাকে পবিত্র(?) রাখার নিয়তে চূড়ান্ত জেনার দিকে না গেলেও প্রেম-ভালবাসায়
এসব সাধারণ উপসর্গগুলোর দ্বারাই অসংখ্য জেনার গুনাহ সংঘটিত হচ্ছে।
এক্ষেত্রে প্রেম-ভালবাসাকে পবিত্র রাখার
বা পবিত্র প্রেম-ভালবাসা করার কোন উপায় আছে কি? নিশ্চয়ই নেই। তাই সেই তথাকথিত প্রেম-ভালবাসা
ইসলমের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ, নাযায়েয ও হারাম কাজ। এমনকি বিয়ের নিয়তে কিংবা বিয়ে
ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পরও আক্বদ সম্পাদনের পূর্বেও কোন রকম প্রেম-ভালবাসা করার অবকাশ ইসলামে
নেই।
কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যুবতী নিজে পর্দা
করে বটে, কিন্তু মাহরাম নয়-এমন যুবককে ভালবাসে এবং রীতিমত পত্রযোগাযোগ রক্ষাসহ হাদিয়া-উপঢৌকন
আদান-প্রদান ও সরাসরি কথাবার্তা বলে থাকে। যদিও উভয়ে একান্ত সান্নিধ্যে যায় না।তারা
ধারণা করে থাকে, এতে দোষের কিছু নেই। বেহায়ার মত না চললেই হলো। কিন্তু এক্ষেত্রে শরীয়তের
স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে বেগানা নারী-পুরুষের মধ্যে
বিয়েপূর্ব যে কোন সম্পর্ক স্থাপন অবৈধ এবং উল্লেখিত এ সকল আচরণ কঠিন গুনাহের পর্যায়ভুক্ত।
বস্তুত ইসলাম বিয়েপূর্ব কোন ধরনের সম্পর্ককে অনুমোদন করে না, তবে যে কেউ তার পছন্দ
মতো জীবনসঙ্গিনী নির্বাচন করতে পারে, কিন্ত গোপনে যোগাযোগ অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে
এবং বিয়ে অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত তাদের সংযমী হতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত
কোন সম্পর্ক স্থাপন, চিঠিপত্র আদান-প্রদান, কথাবার্তা বলা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে
হবে।
সেই অবৈধ প্রেম-ভালবাসা আজ নানাভাবে সমাজকে
বিষিয়ে তুলছে। ভালবাসার বিষাক্ত ছোবলে কত ছেলে-মেয়ের জীবন ধ্বংস হচ্ছে, পরিবার বিধ্বস্ত
হচ্ছে, সামাজিক শঙ্খলা বিপর্যস্ত হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই।
তাই আসুন, এ ব্যাপারে নিজেদের ভুল-অন্যায়
শুধরে নিয়ে তাওবা করে মহান আল্লাহর বিধানের দিকে ফিরে আসি, বর্তমান প্রচলিত কথিত এ
‘প্রেম-ভালবাসা’ নামক পাপ কাজের ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে নিজে বাঁচি, অপরকেই বাঁচাই।
অভিভাবকগণ সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করে ধর্মীয় শিক্ষার দ্বারা সন্তানদের সহীহ দ্বীনি বুঝ
দানের মাধ্যমে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। তাই আমরা বলতে পারি “বিয়ের আগে নয়, বিয়ের পরে
ভালবাসুন” এটাই হোক আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইন ডে‘তে আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।”
No comments:
Post a Comment